বিনা ভোটে নির্বাচিত হচ্ছেন ১৮ চেয়ারম্যান
১৮ অক্টোবর ২০২১ ১৭:১৯
ঢাকা : আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ভোটের আগেই ১৮ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১৭ অক্টোবর এসব ইউপিতে একক প্রার্থী থাকায় তারা সবাই ভোটের আগেই নির্বাচিত হওয়ার কেবল অনুষ্ঠানিকতা বাকি রয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইসি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬ ইউপি‘র মধ্যে নির্বাচনের আগেই নির্বাচিত ১৮ চেয়ারম্যানের মধ্যে চট্রগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় ৯ জন, সীতাকুন্ড উপজেলায় ৪ জন, ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় দুইজন বিনা ভোটে নির্বাচিত মহতে যাচ্ছেন।এছাড়াও শেরপুর সদর উপজেলা ১ জন, জামালপুর সদরে একজন এবং মাগুরা সদর উপজেলায় একজন করে চেয়ারম্যান ভোটের আগেই নির্বাচিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোথা থেকে কে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিংবা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন। এতে কারও কিছু আসে যায় না। কারণ এই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, এ নির্বাচন নিয়ে জনগণেরও কোনো আগ্রহ নেই।’
তিনি বলেন, ‘এক কথায় বলব এই নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণের কাছে নির্বাচন শব্দটি হাস্যকর পরিণত হয়েছে।’
ইসি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬ ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ৪১ হাজার ৭৯০ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪ হাজার ৮০, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৯ হাজার ৫৬১ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২৮ হাজার ১৪৯ জন প্রার্থী হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউপি‘র তফসিল ঘোষণা করা হলেও ২টি ইউপিতে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় নির্বাচন হচ্ছে ৮৪৬টিতে। ৮৪৬টি ইউপি চেয়ারম্যান পদে ৪ হাজার ৮০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাদের মধ্যে ২ হাজার ৬৫৫ জন স্বতন্ত্র এবং বাকিরা ১৭টি রাজনৈতিক দলের। তবে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ৭টিতে এবং রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার একটিতে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই।
দ্বিতীয় ধাপের ইউপিতে জাতীয় পার্টির ১০৭, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৩৬৮, জাপা-জেপির ৩, জাকের পার্টির ৪৯, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ২৬ ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।
ইসি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) আগামী ১১ নভেম্বর ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ১৭ অক্টোবর। এই ধাপে মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২১ অক্টোবর, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিলের শেষ সময় ২৪ অক্টোবর, আপিল নিষ্পত্তির সময় শেষ ২৫ অক্টোবর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৬ অক্টোবর, প্রতীক বরাদ্দের সময় ২৭ অক্টোবর ও ভোটগ্রহণ ১১ নভেম্বর। দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউপি’র মধ্যে ২৬টি ইউপিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) এবং বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করবে ইসি।
ইসি সূত্র জানায়, এরইমধ্যে তিন ধাপে ১ হাজার ২১০টি ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম ধাপের দুই দফায় অনুষ্ঠিত ৩৬৪টি ইউপি নির্বাচনে ৭২ জন বিনা নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের আগেই আরও ১৮ জনসহ মোট ৯০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যানর নির্বাচিত হচ্ছেন।
উল্লেখ্য বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে চারহাজার ইউপিতে ভোট করা যাবে। মামলা জটিলতার কারণে নির্বাচন আটকে আছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এরইমধ্যে নয়বার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে প্রথম ইউপি নির্বাচন এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে নবম ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩, ২০১১ ইউপি নির্বাচন হয়েছে।
চলতি বছরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দশম ইউপি নির্বাচন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে নবম ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ছয়ধাপে চার হাজার ২৭৫টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সারাবাংলা/জিএস/একে