Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বায়ু বিদ্যুতে পরিবেশের পাশাপাশি খরচও বাঁচাচ্ছে উরুগুয়ে

সারাবাংলা ডেস্ক
১৮ অক্টোবর ২০২১ ২২:৪৩

বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি খরচ বাঁচাচ্ছে উরুগুয়ে। উদবৃত্ত্ব বিদ্যুৎ বিক্রির মাধ্যমে হচ্ছে বাড়তি আয়। শুধুমাত্র ২০২০ সালে বিদ্যুতখাতে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছে দেশটি। এর আগে  ২০০৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাতাস এবং সৌর বিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য উৎসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ৭৪৪ মার্কিন ডলারের বেশি সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছিল দেশটি।

বর্তমানে বায়ুবিদ্যুত উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে উরুগুয়ে। দেশটির মোট চাহিদার এক তৃতীয়াংশ মেটাচ্ছে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প। বাতাস ছাড়াও পানি, কাঠ ও জৈব পদার্থ ব্যবহার করে বাকি বিদ্যুতের চাহিদা মেটায় উরুগুয়ে। জলবিদ্যুৎ থেকে আসে ২৯ শতাংশ, জ্বালানী কাঠ ও জৈববর্জ্য পুড়িয়ে ২৩ শতাংশ, ডিজেল থেকে ১০ শতাংশ আর জ্বালানী তেল পুড়িয়ে আসে বাকি ২ শতাংশ বিদ্যুৎ। বায়ুচালিত বিদ্যুতের আগে জলবিদ্যুতই ছিল উরুগুয়ের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস। ২০২০ সালেই প্রথমবারের মত বায়ুবিদ্যুতের উৎপাদন জলবিদ্যুতকে ছাড়িয়ে যায়। ন্যাশনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব পাওয়ার প্লান্টস অ্যান্ড ইলেকট্রিক ট্রান্সমিশন (ইউটিই) এর প্রেসিডেন্সির উপদেষ্টা ফার্নান্দো ফন্টানা বলেন, ‘২০২০ ছিল শুষ্কতম বছর এবং পানি প্রবাহ কম থাকায় বায়ুর তীব্রতা বেশি ছিল। ‘

এদিকে বায়ু বা সৌরশক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি ভোক্তার কাছে চলে যায়। বিদ্যুৎ যেমন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না, তেমনি বায়ু বা সূর্যের আলোও নয়। তাই চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ রফতানি করে উরুগুয়ে। এভাবে তারা প্রায় ৫৭০ মেগাওয়াট রফতানি করেছে যা এনে দিয়েছে বাড়তি ইনকাম। কারণ, বায়ু বা সৌর বিদ্যুৎ বিনামূল্যেই পাওয়া যায়। খরচ বলতে উৎপাদনের, কাঁচামালের জন্য বাড়তি কোন খরচ হয় না।

এখন পর্যন্ত উরুগুয়ের শক্তির মূল উৎস ফসিল ফুয়েল হলেও তারা বায়ু, জল ও সৌরশক্তির মত পরিবেশবান্ধব উৎসের দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হচ্ছে। উরুগুয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট জেনারেটরস অফ উরুগুয়ে (এইউজিপিইই)-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে ২০০৭ এবং ২০১৯ এর মধ্যে বাতাস এবং সৌর বিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য উৎসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ৭৪৪ মার্কিন ডলারের বেশি সঞ্চয় হয়েছে।

বৈদ্যুতিক তার শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে পারে না, সেগুলি ব্যাটারি নয়। যদি একদিকে জেনারেটর থাকে, অন্যদিকে ভোক্তা থাকতে হবে এবং প্রতি সেকেন্ডে শক্তির ভারসামাই একই হতে হবে। যদি তা না হয়, সিস্টেমটি ভারসাম্যহীন হয়ে বিকল হয়ে পড়ে। বিষয়টি পরিষ্কার করেন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভেন্টাসের ইনস্টিটিউশনাল রিলেশনস অ্যান্ড রেগুলেশনের পরিচালক স্কার ফেরেনো। তিনি বলেন, খাড়া রাস্তা দিয়ে বাইক চালিয়ে নামার সময় যেমন গতিশীলতা বজায় রাখতে হয়, নাহলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও তেমনি মেশিনের গতি বজায় রাখা প্রয়োজন। বায়ু বা সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য সমস্যার মুখোমুখি হন তারা। অন্যদিকে জল বিদ্যুতের ক্ষেত্রে এই ঝামেলা নেই। জল চাইলেই বাঁধ দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়। ফলে যখন বায়ু বিদ্যুৎ বেশি উৎপাদন হয় তখন তা অন্য দেশে রফতানি করে উরুগুয়ে। কিন্তু সেটিও কমদামেই দিতে হয়। মূলত দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল বা আর্জেন্টির কাছেই তারা স্বল্পমূল্যে এসব অতিরিক্ত উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রি করে।

ফেরেনো বলেন, বায়ু ও সৌরশক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সংরক্ষণের সুযোগ নাই। তাই কোন কারণে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটলে সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বায়ু বা সৌরশক্তি পুরোটাই প্রাকৃতিক, এর উপরে মানুষের কোন নিয়ন্ত্রণ নাই। বায়ু বা সূর্যের আলো কোথাও জমা রেখে পরে ব্যবহার করা যায় না। অন্যদিকে জলবিদ্যুতে এই ঝামেলা নাই। পানি চাইলেই বাঁধ দিয়ে কাজে লাগানো যায়।

বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে উরুগুয়ের উপরে থাকা দেশ ডেনমার্ক। উরুগুয়ের পর আছে আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, গ্রিস, স্পেন, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়া, হল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও বেলজিয়াম।

ইউরোপ ছাড়াও দক্ষিন আমেরিকার দেশগুলোও পরিবেশবান্ধব উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। মোট চাহিদার ৩ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় সৌরবিদ্যুত প্রকল্পের মাধ্যমে।

সারাবাংলা/আরএফ/

উরুগুয়ে টপ নিউজ বায়ু বিদ্যুৎ সৌর বিদ্যুৎ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর