সড়ক উন্নয়নে ‘অত্যাধিক’ ব্যয়ের প্রস্তাব
১৯ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৪৩
ঢাকা: সড়ক প্রশস্তকরণে অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, প্রকল্পের আওতায় উপজেলা সড়ক প্রশস্ত বা সংস্কার বাবদ প্রতি কিলোমিটারের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা (বিসি রোড), ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ বাবদ প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ২ কোটি টাকা (বিসি রোড) এবং ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা (আরসিসি রোড); যা অত্যাধিক বলে মনে হয়।
এছাড়া সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে ২৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে নিয়ম মেনে ঠিকমতো সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও করা হয়নি। ‘রাজশাহী বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালী করণ’ শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পে ঘটেছে এমন ঘটনা।
গত মাসের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছ, বিদ্যমান পরিপত্র অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে প্রাক্কলিত ব্যয় সম্বলিত প্রকল্পের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি করানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পে সংযোজিত সমীক্ষা প্রতিবেদনে স্থানীয়ভাবে প্রকল্প এলাকার কোনো তথ্য নেই। শুধুমাত্র কিছু জাতীয় পরিসংখ্যানের সন্নিবেশ রয়েছে।
সমীক্ষা প্রতিবেদনটি পরিকল্পনা বিভাগের নির্ধারিত ফরম্যাট অনুযায়ী তথ্য সংযোজন করা হয়নি। তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে নির্ধারিত ফরম্যাট অনুযায়ী ফিজিবিলিটি স্টাডি করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, বলে সভায় মত দেওয়া হয়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ‘রাজশাহী বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ঠিক মতো না হওয়ায় সঠিক ব্যয় প্রাক্কলন করা যায় না। অনেক সময় ধারণা করেই ব্যয় প্রস্তাব দেওয়া হয়। কোন সময় তারা ইচ্ছে করেই বেশি ব্যয়ের প্রস্তাব করে। কারণ তাদের ধারণা পিইসি সভায় ব্যয় তো কমাবেই, তবে এ ধরনের প্রবণতা ঠিক নয়।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলার ৬৭টি উপজেলার পল্লী এলাকায় আধুনিক নাগরিক সুবিধা স্থাপন করে উন্নত যোগাযোগ নেটওর্য়াক তৈরি করার জন্য ১৬.০৯ শতাংশ উপজেলা সড়ক ও ০.৮৪ শতাংশ ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্ত ও শক্তিশালী করা হবে। প্রকল্প এলাকায় পল্লী সড়কের ধারণক্ষমতা ও সড়ক নিরাপত্তা বাড়ানোর মাধ্যমে কৃষি ও অকৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, কৃষি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সুবিধা সম্প্রসারণ এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যাবে। সময়ের সঙ্গে এসব সড়কে প্রাক্কলিত হিসাবের চেয়ে বেশি সংখ্যক যানবাহন চলাচল করে তাই এসব সড়কগুলো উন্নয়ন অপরিহার্য।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর উপজেলা ইউনিয়নের বেশির ভাগ সড়ক নির্মাণ করা হয়। এসব রাস্তা ইউনিয়ন পরিষদ বা জেলা পরিষদের আওতাধীন মাটি দ্বারা নির্মিত পুরোনো বাঁধের ওপর তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসব অবকাঠামো প্রয়োজনীয় ধারণক্ষমতা ও যথাযথ জ্যামিতিক মানসম্পন্ন নয়। এজন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে ৮২২.৩১ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক প্রশস্ত ও শক্তিশালী করা, ৩৪.৭৪ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্ত ও শক্তিশালী করা ও ৩.৩৯২ দশমিক ৭০ মিটার ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ, পুনর্নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান আরিফা সিদ্দিকা স্বাক্ষরিত পিইসি সভার কার্যপত্রে কমিশনের মতামত হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকল্প প্রস্তাবনায় বিভাগ ও জেলাভিত্তিক বিদ্যমান সড়কের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কোনটি কোন ধরনের সড়ক তা উল্লেখ করা হয়নি এবং উপজেলাভিত্তিক তথ্য দেওয়া হয়নি। এ ধরনের তথ্য প্রকল্পের প্রস্তাবনাতেও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। ডিপিপিতে টেবিল আকারে সড়কের বিপরীতে ট্রাফিক ভলিউমের পরিমাণ উপস্থাপন করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে কোন সড়ক কত থেকে কত প্রশস্ততায় উন্নীত করা হচ্ছে সেই তথ্যও ছকে উপস্থাপন করা আবশ্যক।
অন্যদিকে, পরামর্শক খাতে (প্রতিষ্ঠান) ২৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং ব্যক্তিখাতে ২ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিপিপিতে পরামর্শকের প্রয়োজনীয়তা, পরামর্শকের ক্যাটাগরি অনুযায়ী নাম সংখ্যা, জনমাস, কার্যপরিধি (টিওআর) উল্লেখ করা প্রয়োজন। তাছাড়া সার্ভে জরিপ মাটি পরীক্ষা খাতে ৩ কোটি টাকা প্রস্তাবের বিষয়েও আলোচনা করা যেতে পারে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে অর্থ বিভাগের জনবল নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জনবল নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশের জন্য ৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ৮৪টি আউটসোর্সিংসেবার বেতন-ভাতা নির্ধারণ হওয়া প্রয়োজন। জনবল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২টি পরিবহন সেবা ও ২৪টি হেভি ড্রাইভার সেবা বরাদ্দের বিপরীতে প্রকল্পে ২টি জিপ, ৯টি পিকআপ, ২৪টি রোলার, ৮টি গ্রেডার মেশিন, ৭০টি মোটরসাইকেল কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৬৯৯.৮৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৩০০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা প্রয়োজন এবং ভূমির মূল্য সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র ডিপিতে সংযুক্ত করা প্রয়োজন। প্রকল্পে ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাতে ৫১ কোটি টাকা এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে ৯৯ কোটি ৭২ লাখ ৯৬ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সব খাতে এত বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ রাখার যৌক্তিকতা নেই। তাই এসব খাতে ব্যয় কমানো যেতে পারে। তাছাড়া অন্য খাতে প্রস্তাবিত ১৫ লাখ টাকা বাদ দেওয়া যেতে পারে বলেও মত দেয় কমিশন।
সারাবাংলা/জেজে/এমও