Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চড়ের বদলা নিতে নয়, স্ত্রীকে ধর্ষণের প্রতিশোধ নিতে অ্যাসিড


৫ এপ্রিল ২০১৮ ২২:৪৯

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: স্ত্রীকে ধর্ষণ, বারবার ফেসবুকে সেই ছবি পাঠিয়ে উত্যক্ত করা এবং ইন্টারনেটে সেই ছবি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল তমাল চন্দ্র দে (২৫) নামে এক যুবক। স্ত্রীর এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তমালকে অ্যাসিড মারার কথা জানিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ধর্ষিতার স্বামী।

জবানবন্দিতে ওই যুবক বলেছেন, তমাল কত বিকৃত মানসিকতার ছেলে সেটা বোঝাতেই তাকে অ্যাসিড মেরে ঝলসে দেওয়া হয়েছে।

২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নগরীর কোতয়ালী থানার রহমতগঞ্জে তমাল নামে ওই যুবককে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র দে’র ছেলে তমাল অ্যাসিডে দগ্ধ হয়ে দুই চোখ হারিয়েছেন।

এই ঘটনায় বাবুলের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছিল, তমাল যে তরুণীর সঙ্গে প্রেম করতো, সেই তরুণী গোপনে আরেকজনকে বিয়ে করে ফেলে। ঘটনাটি জানতে পেরে তমাল তাকে ডেকে এনে চড় মারে। চড়ের প্রতিশোধ নিতেই ওই তরুণী স্বামীর মাধ্যমে তমালকে অ্যাসিড মারে।

তবে মামলা দায়েরের এক বছর পর গত ৩০ মার্চ গ্রেফতার হওয়া দম্পতির জবানবন্দিতে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। বুধবার (০৪ এপ্রিল) অন্তঃসত্তা ওই তরুণী এবং তার স্বামী চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মাসুদ পারভেজের আদালতে জবানবন্দি দেন। বৃহস্পতিবার জবানবন্দির অনুলিপি এসেছে সারাবাংলার হাতে।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এতোদিন বাদীর বক্তব্যের ভিত্তিতে তদন্ত করছিলাম। এখন আরেক ধরনের বক্তব্য পেয়েছি। দুই ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এবং সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সঠিকভাবে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

দম্পতির জবানবন্দিতে যেসব তথ্য এসেছে: প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ার সময় গ্রেফতার হওয়া দম্পতির মধ্যে সম্পর্ক হয়। এরপর ২০১৫ সালে সিলেটে এক বিয়েতে তমালের সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয় হয় এবং ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। তাদের মধ্যে নিয়মিত কথাবার্তা হতো, যেটা তরুণীর স্বামীও (তখন প্রেমিক) জানতেন।

২০১৫ সালের আগস্টে তমাল তার মা-বোনের সঙ্গে তরুণীর ফোনে কথা বলিয়ে দেন। এতে ওই তরুণীর আরও বিশ্বাস জন্মে। এরপর তারা একদিন দেখা করেন। ওইদিন তমাল তরুণীকে চট্টগ্রাম নগরী থেকে পটিয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে নিয়ে তরুণীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে তমাল। এ সময় তমাল কৌশলে ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করেন। ওইদিন তমাল পটিয়ায় থেকে যান এবং তরুণীকে বাসে করে নগরীতে পাঠিয়ে দেন।

তরুণী বাসায় এসে বিষয়টি তার মাকে খুলে বলেন। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে তারা বিষয়টি চেপে যান। এর মধ্যে তমাল ওই তরুণীর স্বামীকে (তখন প্রেমিক) ফোন করে বিষয়টি জানিয়ে দেন। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল ছবি পাঠাতে থাকেন তমাল। শুরু হয় দুজনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি। তবে তরুণী তাকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

তরুণীর দোষ নেই বুঝতে পেরে দুজন আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করেন। বিষয়টি দুই পরিবারে জানাজানি হলে কেউ মেনে নেয়নি। এক বছর পর অবশ্য মেনে নেয়। কিন্তু বিয়েল কথা শুনে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তমাল। বারবার অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাঠাতে থাকেন এবং একপর্যায়ে সেগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ারও হুমকি দেন।

জবানবন্দিতে ওই যুবক বলেন, তমাল আমাদের জীবন অতীষ্ঠ করে তুলেছিল। তমালের কথা, ছবি সবসময় আমাকে ও আমার স্ত্রীকে তাড়া করত। প্রায়ই আতঙ্কে ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও যদি তমাল ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। স্ত্রীর সম্মান রক্ষায় আমি তমালকে কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিই।

ফেসবুকে একটি ফেইক আইডি খুলে তমালের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে ওই যুবক। সেই আইডি থেকে তমালকে রহমতগঞ্জ এলাকায় এসে দেখা করার জন্য বলা হয়। তমাল রাজি হয়। অ্যাসিড ছুঁড়ে দেওয়া হয় তমালের মুখে।

ওই যুবক জবানবন্দিতে আরও বলেন, তমালের চোখ নষ্ট করার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। আমার ইচ্ছা ছিল সে তার বিকৃত চেহারা দেখে যেন বুঝতে পারে সে কত বিকৃত মনের লোক।

জবানবন্দিতে এসিড নিক্ষেপের পরিকল্পনার কথা কিছুই তার স্ত্রী জানতেন না বলে জানিয়েছে ওই যুবক। জবানবন্দিতে তার স্ত্রীও বিষয়টি জানতেন না বলে জানিয়েছেন।

এই বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও মামলার বাদী বাবুল চন্দ্র দে’র বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

 

সারাবাংলা/আরডি/এমআই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর