জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
১৯ অক্টোবর ২০২১ ১৪:১১
ঢাকা: দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সকালে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যুক্ত হন।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই নির্দেশনার কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তদন্ত করে যারা এ সব ঘটনার সূত্রপাত করল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রতি এ সব ইস্যুতে মতবিনিময় করতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়মিত কথা বলছেন। তাকে বলে দেওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে স্ট্যান অ্যাকশন নেওয়ার জন্য। যারা যারা এর সঙ্গে জড়িত আছে, তাদের অবশ্যই ধরতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে এটা পরিষ্কার করতে হবে যে, রিপার্কেশন করা যাবে না, রি-অ্যাক্ট করা যাবে না। কেউ যদি কোরআন অবমাননা করে, কোরআন আমাকে পার্মিশন দেয়নি অন্য ধর্মের কোনো কিছু ভাঙার। সেটা আরও বড় অপরাধ হবে। এটা সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। কেউ যদি আমার ধর্মের অবমাননা করে, তাহলে আমি প্রতিবাদ করতে পারি, সরকারের কাছে দাবি জানাতে পারি। কিন্তু তার ওখানে গিয়ে ধংসাত্মক কার্যক্রম করব, ইসলামে এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এবং এটা ফিতনা।’
গত বুধবার কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন পাওয়া যাওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার জেরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় জনতার সংঘর্ষে চারজন মারা যান। এ ছাড়া নোয়াখালীর বেগমগঞ্জেও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় একজন নিহত হন।
কুমিল্লার পূজামণ্ডপে ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট, চাঁদপুর ও রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন, মন্দির ও মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
১৩ অক্টোবর রাত সোয়া ৮টায় হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিল থেকে লক্ষ্মীনারায়ণ আখড়ায় ঢিল ছোড়া হয়। একপর্যায়ে মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে চারজন নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
হামলার ঘটনার পর রাত ১১টা থেকে হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়ার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিন দুপুরে জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঞ্চনা গ্রামের জোট পুকুরিয়া বাজারে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, জামায়াত ও শিবিরের একদল নেতাকর্মী জড়ো হন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সেখানে ৭০-৮০ জনকে দেখতে পান। তারা মিছিল করে জোট পুকুরিয়া এলাকায় সর্বজনীন শিবমন্দির পূজামণ্ডপে হামলার উদ্দেশে অগ্রসর হয়। পুলিশ বাধা দিলে তারা পূজামণ্ডপে ঢুকতে না পেরে গেইট ভাঙচুর করে।
ফেনীতে ১৬ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে ফেনী শহরের কালীমন্দির এলাকায় পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভে অংশ নিতে জড়ো হচ্ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এ সময় ফেনীর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজ শেষে মুসল্লিরা বের হয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয়।
একপর্যায়ে দুইপক্ষের স্লোগানের কারণে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ৫টার দিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ফেনীতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের একটি মিছিল ঘটনাস্থলে এলে উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে অন্তত ৫০ জন আহত হন।
কুমিল্লার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটে জকিগঞ্জে ১৪ অক্টোবর মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ১৭ অক্টোবর রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে মাঝিপল্লীতে অন্তত ২০ হিন্দু পরিবারের বাড়িঘরে আগুন লাগায় সন্ত্রাসীরা।
হিন্দুদের ওপর হামলায় ঘটনায় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। এ রকম সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এজেড/একে