অনলাইন রিটার্ন জমায় ১৩ বার দেশ সেরা কুমিল্লা ভ্যাট
১৯ অক্টোবর ২০২১ ১৯:১৬
ঢাকা: অনলাইন রিটার্ন জমায় আবারও শীর্ষে কুমিল্লা কমিশনারেট। এ নিয়ে তের বার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলো কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ এবং ভ্যাট কমিশনারেট। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে মাঠে সক্রিয় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট (সিইভিসি) কুমিল্লা টিম। প্রতিনিয়ত নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় কুমিল্লা। আগস্টে অনলাইন রিটার্ন দাখিলের হার ছিল ৯৫ দশমিক ৮৩% আর সেপ্টেম্বরে অনলাইন রিটার্ন দাখিলের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭ দশমিক ০৩%। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামগ্রিক অনলাইন রিটার্ন জমার হার প্রায় ৫০ শতাংশ।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গিয়েছে— কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলযোগ্য প্রতিষ্ঠান (সংখ্যায়) : ১১ হাজার ৪৫৯। আর অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল হয় এই কমিশনারেটে ১১ হাজার ১১৯। ফলে অনলাইনে রিটার্ন জমার শতকরা হার ৯৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
আরও জানা গিয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট রয়েছে। সেপ্টেম্বরে কুমিল্লাতে নিবন্ধিত রিটার্ন দাখিল প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১১ হাজার ৪৫৯টি। রিটার্ন দাখিল করেছে ১১ হাজার ১১৯টি প্রতিষ্ঠান। আর রিটার্ন শতকরা হার ৯৭ দশমিক ৩ শতাংশ। যা সারা দেশের মধ্যে রিটার্ন দাখিলে প্রথম। এরপর যশোর কমিশনারেটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৬ হাজার ৩০০। রিটার্ন দাখিল করেছে ১৫ হাজার ২৯৯টি প্রতিষ্ঠান। শতকরা হারে ৯৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এলটিইউ’তে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১০৯টি। রিটার্ন দাখিল করেছে ৯৯টি প্রতিষ্ঠান। শতকরা হারে ৯০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। রংপুর কমিশনারেটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১২ হাজার ৭১৫টি। রিটার্ন দাখিল করেছে ১০ হাজার ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান। শতকরা হারে ৮৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সিলেট কমিশনারেটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১১ হাজার ৬৭২টি। রিটার্ন দাখিল করেছে ৯ হাজার ৮৬টি প্রতিষ্ঠান। শতকরা হারে ৭৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কমিশনারেটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৩ হাজার ২৫৪টি। রিটার্ন দাখিল করেছে ২৪ হাজার ৭৪৮টি প্রতিষ্ঠান। শতকরা হারে ৭৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। রাজশাহী কমিশনারেটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৭ হাজার ৪৩৬টি প্রতিষ্ঠান। রিটার্ন দাখিল করেছে ১২ হাজার ৫২০টি প্রতিষ্ঠান। শতকরা হারে ৭১ দশমিক ৮১ শতাংশ। খুলনা কমিশনারেটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২২ হাজার ৪১৭টি। রিটার্ন দাখিল করেছে ১১ হাজার ৮০৮টি প্রতিষ্ঠান। শতকরা হারে ৫২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ঢাকা পূর্ব কমিশনারেটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২০ হাজার ৭৭১টি। রিটার্ন দাখিল করেছে ৯ হাজার ৮৫৪টি প্রতিষ্ঠান। শতকরা হারে ৪৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
ঢাকা পশ্চিম কমিশনারেটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩২ হাজার ৬৮২টি। রিটার্ন দাখিল করেছে ১৩ হাজার ৪৮টি প্রতিষ্ঠান। শতকরা হারে ৩৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। ঢাকা উত্তর কমিশনারেটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪৬ হাজার ৪০৫টি। রিটার্ন দাখিল করেছে ১৪ হাজার ১৬০টি প্রতিষ্ঠান। শতকরা হারে ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ। আর ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭৬ হাজার ৩৪১টি। রিটার্ন দাখিল করেছে ১৭ হাজার ৪৭১টি প্রতিষ্ঠান। শতকরা হারে ২২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
সবমিলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেল ১২টি কমিশনারেটে নিবন্ধন করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩ লাখ ১ হাজার ৫৬১টি। সেপ্টেম্বর মাসে রিটার্ন দাখিল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪১। শতকরা হারে যা ৪৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এদিকে এনবিআর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গত বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর,ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি,ফেব্রুয়ারি,মার্চ, এপ্রিল, মে, জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে অনলাইন রিটার্ন দাখিলে দেশ সেরা কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাউজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট।
এদিকে কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড়শ সদস্যের টিমকে ৬৩টি জুম সভায় প্রশিক্ষিত ও নিবিড় মনিটরিং করা হয়েছে। কমিশনারেটের অধীন ১৬টি সার্কেল ও ৬টি বিভাগের নিরলসভাবে কাজ করেছেন। অনলাইন রিটার্ন জমায় বিশেষ নজরদারি হিসেবে নানা পদক্ষেপও নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, করদাতাদের বিরক্ত না করে সার্কেল অফিস থেকে টেলিফোনে যোগাযোগ, স্বল্প সংখ্যক জনবল থেকে দক্ষদেরকে বাছাই করে গভীর রাত পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল,রিটার্ন দেয়নি এমন করদাতাদের কাছে মোবাইলে বাল্ক এসএমএস প্রেরণ ইত্যাদি।
শুধু তাই নয়, করদাতাগণকে কাউন্সেলিং,শীর্ষ করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে সৌজন্য উপহার সামগ্রী প্রদান,রিটার্ন জমা ও করদাতা সচেতনতায় ফেসবুক গ্রুপে প্রচারণা, করদাতাদের রিটার্ন জমার সুবিধার জন্য শুক্র ও শনিবারও অফিস খোলা রাখা, কর্মকর্তাদেরকে অনলাইন নিবন্ধন ও রিটার্ন দাখিল সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। কর্মকর্তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সময় সময়ে পুরস্কার দেওয়ার কাজগুলো করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ এন্ড ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার (সদর দপ্তর, কুমিল্লা) মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন সারাবাংলাকে বলেন, অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট সর্বমোট তেরবার ‘প্রথম’। চারটি সার্কেল শতভাগ রিটার্ন দাখিল করতে সক্ষম হয়েছে। আশা করছি পর্যায়ক্রমে ষোলটি শতভাগ রিটার্ন অনলাইনে করতে সক্ষম হবে।
কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, সাফল্য অর্জনের চেয়ে ধরে রাখা কঠিন। কুমিল্লার কর্মপ্রবণ এনবিআরের সম্মান উচ্চকিত করেছে। করোনাকালে কুমিল্লা টিমের জন্য বিষয়টি খুবই চ্যালেঞ্জের ছিল। আগেও বলেছি দলবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রতিযোগিতা এ অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল নিয়ামক এবং দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ কর্মকর্তাদের পরিশ্রম ও সাফল্যের পিপাসা কুমিল্লা কমিশনারেটকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ও রিটার্ন দাখিলে উপর্যুপরি সাফল্য এনে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সক্ষম কর্মকর্তাদের বাছাই করে জটিলতর কাজে নিয়োগ, মনিটরিং উদ্বুদ্ধকরণ এক্ষেত্রে গতিবৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। সারা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের এরকম কাজের ধারা অব্যাহত থাকা উচিত। দক্ষ, সক্ষম, উপযুক্ত ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে সকল কর্মকর্তাদের আমরা পুরস্কৃত করি। ভবিষ্যতেও তাদের পুরস্কৃত করা হবে। জনবলের সীমাবদ্ধতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে গেছে সিইভিসি টিম। ধরে রেখেছে ধারাবাহিক সাফল্য।
সারাবাংলা/এসজে/একে