রাষ্ট্রধর্ম বাতিলসহ ৮ দাবি শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের
১৯ অক্টোবর ২০২১ ২০:৫৫
দেশের বিভিন্ন জেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির-মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর ও বসতভিটায় অগ্নিসংযোগ-লুটপাটসহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাবেশ থেকে এসব সহিংসতার বিচার দাবির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাতিলসহ আট দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশস্থলে রঙ-তুলি হাতে স্লোগান লিখে প্রতিবাদ জানান চিত্রশিল্পীরা।
আরও পড়ুন- প্রতিবাদে মুখর শিল্পী-সাহিত্যিকরা, মানুষরূপী অসুর বধের আহ্বান
সমাবেশে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আট দফা দাবি উত্থাপন করেন সাহিত্যিক স্বকৃত নোমান। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— দুর্গাপূজাকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে; রামু, নাসিরনগর, শাল্লা, কুমিল্লা, হাজীগঞ্জ, নোয়াখালী ও রংপুরে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার প্রকৃত কারণ জনসম্মুখে প্রকাশ ও প্রতিটি ঘটনার বিচার করতে হবে এবং অতীতের সাম্প্রদায়িক হামলার হোতা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের যারা রাজনৈতিক দলগুলোতে প্রকাশ্যে সক্রিয়, তাদের চিহ্নিত করে বহিষ্কার ও বিচার করতে হবে।
সবার মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছড়িয়ে দিতে ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ধর্মসভা তথা ওয়াজ মাহফিলে সাম্প্রদায়িক ও নারীবিদ্বেষমূলক বক্তব্য বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তক থেকে সাম্প্রদায়িক পাঠ বিলুপ্ত করে অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যপুস্তুক প্রণয়নের দাবি জানানো সময় সমাবেশে।
দাবিগুলোর মধ্যে আরও বলা হয়— বহু জাতি ও বহু ধর্মসম্প্রদায়ের এই দেশের সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বাতিল করতে হবে; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সরকারি উদ্যোগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করতে হবে।
সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প নির্মূলের লক্ষ্যে সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্ব তুলে ধরেন শিল্পী-সাহিত্যিকরা। দাবিতে তারা বলেন— সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সারাদেশের সংস্কৃতিচর্চার (নাটক, গান, নৃত্য, যাত্রাপালা, পালাগান, বাউলগান) প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি স্বাধীন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সরকারি পৃষ্টপোষকতা দিতে হবে; এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে পাঠাগার ও সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাসুদুজ্জামান, পঞ্চগড়-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সংগীতা ইমাম, একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক জুলহাস নুর বলেন, চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন গৌরব একাত্তরের সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন, যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুস্তাফিজ বিপ্লব, কথা সাহিত্যিক আহমদ মোস্তফা কামাল, লেখক ও গবেষক চঞ্চল আশরাফ, অভিনয়শিল্পী মৌটুসী বিশ্বাস, চিত্রনির্মাতা মাসুদ প্রতীক, কবি লেখক শিক্ষক ঝর্ণা রহমান, কবি টোকন ঠাকুর, কথা সাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, আবৃত্তিশিল্পী মাসুম আজিজুল বাশার ও রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী ড. মকবুল হোসেন।
ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা
সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর
বিক্ষোভ সমাবেশ রাষ্ট্রধর্ম শিল্পী-সাহিত্যিকদের সমাবেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি