খুনের ঘটনায় বাবা আটক, থানায় ঢুকে ছেলের বিষপান
২০ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৩৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে মারামারিতে দু’জন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করে। আটককৃত ব্যক্তির ছেলে তার বাবার আটকের প্রতিবাদে থানায় ঢুকে ফেসবুকে লাইভ চলাকালীন অবস্থায় বিষপান করেছেন। এ ঘটনায় বাঁশখালীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে বাঁশখালী পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের মনছুরিয়া বাজারে মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত আব্দুল খালেকের (৩৫) বাড়ি বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ জলদী গ্রামের রঙ্গিয়াঘোনা এলাকায়। তিনি বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা সংগঠনের বাঁশখালী উপজেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক। এছাড়া তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নিহত আরেকজন খালেকের চাচাতো ভাই সোলতান মাহমুদ টিপু (৩৮)। তার বাড়িও একই গ্রামে।
এছাড়া বিষপানে অসুস্থ রাসেল ইকবাল (২৭) তাদের প্রতিবেশী। তিনি পৌরসভা সংলগ্ন শীলকূপ ইউনিয়নের মোহাম্মদ সিদ্দিকের ছেলে। রাসেল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাড়ির সীমানা নিয়ে চাচাত ভাইদের মধ্যে বিরোধের জেরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মারামারি হয়েছে। আব্দুল খালেক নামে একজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। আহত আরেকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে খালেকের লাশ উদ্ধার করেছি। এসময় খুন হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের অভিযোগমতে একজনকে আটক করা হয়।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার সারাবাংলাকে জানান, মারামারিতে আহত চারজনকে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে সোলতান মাহমুদ টিপুকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাকি তিনজন হলেন, মো. কামাল উদ্দিন (৫০), মনজুর (৪৫) ও বাহাদুর (২৭)। কামাল ও মনজুরকে ২৮ নম্বর এবং বাহাদুরকে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, পুলিশ পৌরসভা সংলগ্ন শীলকূপ ইউনিয়নে নিজ দোকান থেকে ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ইকবালের বাবা সিদ্দিককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাসেল বিষয়টি শুনে উত্তেজিত হয়ে উঠেন। তিনি প্রথমে থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলেন। এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে থানা কম্পাউন্ডের ভেতরে ফেসবুক লাইভে আসেন। লাইভে ঘোষণা দিয়ে তিনি বিষপান করেন। পুলিশ তাকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রাসেল ইকবালের ঘনিষ্ঠজন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মমিনুর রহমান চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাসেলের সঙ্গে থানার দালাল শুক্কুরের ব্যক্তিগত ঝামেলা আছে। শুক্কুর পুলিশকে দিয়ে রাসেলের বাবাকে আটক করিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে। রাসেল যখন সেটা শুনতে পেয়েছে, তখন সে বলেছে- আমি ছাত্রলীগের নেতা, আমার বাবাকে যদি মিথ্যা মামলায় আটক হতে হয়, এ জীবন রেখে লাভ কি! সেটা বলে সে থানায় ওসির রুমের সামনে গিয়ে বিষ খেয়েছে।’
ওসি কামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। খুন হওয়া আব্দুল খালেকের পরিবারের সদস্যরা আমাদের দেখিয়ে দেন যে, সিদ্দিক খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল। সেই অভিযোগ পেয়ে আমরা তাকে আটক করেছি। আমরা যদি তখন আটক না করতাম, আমরা তো বিতর্কিত হয়ে যেতাম। আমাদের বিরুদ্ধে আসামি পেয়েও আটক না করার অভিযোগ উঠত। সেজন্য আটক করেছি। এরপর আমাদের থানায় ঢুকে তার ছেলে যে ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি দুঃখজনক। আমাদের পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।’
সারাবাংলা/আরডি/আইই