পরিস্থিতি যারা ঘোলাটে করছে তাদের দেখে নেব: নওফেল
২০ অক্টোবর ২০২১ ২১:১৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, যারা পূজামণ্ডপে আক্রমণ করেছে তাদের কেউ রেহাই পাবে না। যারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চায়, তাদের আমরা দেখে নেব।
বুধবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর নন্দনকাননে ‘চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে’ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে ফানুস উৎসবের উদ্বোধনের সময় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উৎসবে সমবেতদের উদ্দেশে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং ধর্মে-ধর্মে সম্প্রীতি ও শান্তির জন্য আমাদের সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন। আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বে একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। আজ একইদিনে আমরা তিন সম্প্রদায় তিনটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করছি। আজ আমরা মুসলমান সম্প্রদায় ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেছি, বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রবারণা পূর্ণিমা ও হিন্দু সম্প্রদায় লক্ষ্মী পূজা করছে। এভাবে বাংলাদেশ সকল ধর্মের সম্মিলন ও উৎসবের জায়গা হিসেবে পরিচিত হবে।’
‘যারা এই বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিত করতে চায়, ষড়যন্ত্র করে, যারা বিগত কয়েকদিন ধরে সনাতন ধর্মের দুর্গাপূজার মণ্ডপে আক্রমণ করেছে, যারা সারা বাংলাদেশে এই আক্রমণ করে দ্বীনে ইসলামকে কলঙ্কিত করেছে এবং সনাতন ধর্মের ভাইবোনদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে, তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি এবং এরা কেউ রেহাই পাবে না, এই অঙ্গীকার আমরা করছি।’
সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে নওফেল বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে পুলিশ ভাইয়েরা তৎপর থেকে আক্রমণকারীদের অনেককে গ্রেফতার করেছে। ১৭ কোটি মানুষের দেশে মাত্র আড়াই লাখ পুলিশ দিয়ে যে নিরাপত্তা আমরা দিতে পারছি, এর চেয়ে বেশি নিরাপত্তা আমরা দেব। দলের নেতাকর্মীদের সবাইকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, নবীপ্রেমে উজ্জীবীত হয়ে এলাকায়-এলাকায় সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করতে।’
তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশকে আমরা অসাম্প্রদায়িক, স্থিতিশীল ও নিরাপদ বাংলাদেশ হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ হিসেবে, শেখ হাসিনার সম্প্রীতির বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। ১৯৭১ সালে আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছি। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি। পরিস্থিতি যারা ঘোলাটে করেছে, তাদের আমরা দেখে নেব। তাদের বিরুদ্ধে আমরা সবাই মাঠে নেমেছি। তাদের কেউ রেহাই পাবে না।’
প্রবারণা পূর্ণিমার ফানুস উড়ানো নিয়ে নন্দনকানন বৌদ্ধবিহারে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী নারীপুরুষ ফানুস উৎসবে অংশ নিতে সেখানে হাজির হন। ফানুসের গায়ে ছিল, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই’- এমন শ্লোগানসহ শান্তি ও সম্প্রীতির বিভিন্ন বার্তা।
এদিকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকেই পূণ্যার্থীদের আগমনে মুখর হয়ে উঠে নগরীর বৌদ্ধমন্দিরগুলো। এদিন সকাল থেকেই নানা উৎসবে মেতে উঠেন তারা। কৃপালাভের আশায় ভক্তিভরে গৌতম বুদ্ধের চরণে মঙ্গলপ্রদীপও প্রজ্জ্বলন করেন হাজারো নারীপুরুষ। এছাড়া দিনভর পঞ্চশীল, অষ্টশীল, পূজা, ধর্মীয় আলোচনা, পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়, আহার-বিনোদনের পর সন্ধ্যায় আনন্দমুখর পরিবেশে ফানুস উড়িয়েছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন। এই ফানুস উৎসব উপভোগ করতে নগরীর বৌদ্ধবিহারগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ভিড় জমে যায়।
ছবি: শ্যামল নন্দী, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম