Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কল্প জাহাজের ভাসানে সম্প্রীতির আনন্দ

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২২ অক্টোবর ২০২১ ১৫:৫৯

কক্সবাজার: বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুসের আলোয় রঙিন হওয়ার পর ভেসেছে কল্প জাহাজ। তার সঙ্গে উৎসবে মেতেছেন কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সব বয়সী মানুষ। কেবল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ই নয়, সনাতন-মুসলিম-খ্রিষ্টানসহ ধর্মাবলম্বী পর্যটকদেরও সম্প্রীতির মহা-মিলনমেলায় পরিণত হয় এই উৎসব।

রামুর বাঁকখালী নদীতে পালন হয় কল্প জাহাজ ভাসানের এই উৎসব। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ২৮ বুদ্ধের আসন ও বৌদ্ধ প্যাগোডার আকৃতিতে দৃষ্টিনন্দন কল্প জাহাজে ভাসানো হয় হাতি, সিংহ, ঘোড়া, ময়ুর। পাঁচটি কল্প জাহাজে ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে তালে শিশু-কিশোর ও তরুণরা মেতে ওঠে বাঁধভাঙা আনন্দে। রঙ-বেরঙের কাগজে আকর্ষণীয় নির্মাণশৈলীতে পাঁচটি কল্প জাহাজ নদীর এপার থেকে ওপারে চলে ‘বুদ্ধ কীর্তন’ ও নানা বাদ্যের তালে তালে।

বিজ্ঞাপন

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসবে মুসলিম-হিন্দু-খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের অনুসারীরাই সাম্প্রদায়িকতার বিভেদ ভুলে অংশ নেন। বরাবরের মতো এবারও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে এটি পরিণত হয় সার্বজনীন উৎসবে।

উৎসবে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বলছে, ধর্মের বিভাজন পেরিয়ে এমন সার্বজনীনন উৎসবই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। এমন উৎসবের প্রসারই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে সহযোগী। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকেই সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন।

রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা রিকু বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, অনেক বছর ধরে ফানুস উৎসব শেষে জাহাজ ভাসা উৎসব পালন করে আসছেন রামুর বৌদ্ধরা। এ উৎবের ধর্মীয় তাৎপর্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রত্যেক ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলা। এ বৌদ্ধিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সব ধর্মের মানুষের যে মিলনমেলা, এটিই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নিণির্মানে সহযোগী হবে।

বিজ্ঞাপন

রামু উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, রামুর এই ঐতিহ্যবাহী জাহাজ ভাসা উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রমাণ মেলে— বাংলাদেশ সার্বজনীন সত্তার দেশ। এখানে সার্বজনীন মেলবন্ধন হয়ে আসছে। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের এ সার্বজনীন মেলবন্ধন অটুট থাকুক— এটিই আমাদের সবার প্রত্যাশা।

স্থানীয় কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, কেবল বৌদ্ধ সম্প্রদায় নয়, সব সম্প্রদায়ের মানুষ জাহাজ ভাসা উৎসবে সামিল হয়েছে। প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করবে, কেউ কারও ধর্মে আঘাত হানবে না— এটিই হোক আমাদের শিক্ষা।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন, প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের পরদিন বিকেল ৩টা থেকে ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। প্রবারণা দিবসে সজ্জিত জাহাজে করে বৈশালী নগরবাসীর অন্তহীন দুর্দশা দূর করে বিম্বিসার রাজগৃহে ফেরার পথে মানুষ, দেবতা, বহ্মা, নাগ সবাই মহামতি বুদ্ধকে পূজা করেছিল। সেই হৃদয়স্পর্শী স্মৃতিকে অম্লান রাখতে শত বছর ধরে রামুতে জাহাজ ভাসা উৎসব লালন করে আসছে।

সারাবাংলা/টিআর

কল্প জাহাজ কল্প জাহাজ ভাসান প্রবারণা পূর্ণিমা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর