সর্বদলীয় ইসি চায় ইসলামী আন্দোলন
২৩ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৩২
ঢাকা: সব দলের মতামতের ভিত্তিতে সার্বজনীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) বা সর্বদলীয় ইসি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শনিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ প্রস্তাব তুলে ধরেন ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, ‘দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচন কমিশন। একটি শক্তিশালী ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নির্বাচন কমিশন দেশের সংবিধান রক্ষা ও জনতার সরকার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। আর আমরা দেখলাম, এই নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেই ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কময় নির্বাচন করা হয়েছে বাংলাদেশে। গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে যে, এই নির্বাচন কমিশন কতটা নির্মমভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে হত্যা করেছে। চলতি ইসি ও তাদের নিয়োগকর্তারা যে ইতিহাসের কালো স্থানেই থাকবেন, তা বলাই বাহুল্য।’
সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ প্রায়। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। সরকার থেকে বলা হচ্ছে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি নিয়োগ করা হবে। সার্চ কমিটির বাছাই করা ইসি যে কত জঘন্য হতে পারে তার নজীর তো এখনো চলমান। আসলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে এসব সার্চ কমিটি আর আইন কোনটাই ফল দেবে না। সেজন্য সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি সার্বজনীন ইসি গঠন করুন। অথবা প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলো থেকে একজন করে নিয়ে একটি সর্বদলীয় ইসি গঠন করুন।’
‘অন্যথায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অবস্থার প্রেক্ষিতে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলবে। জনতার ভোট নিয়ে আর কোনো ছলচাতুরী করতে দেওয়া হবে না’, বলেন সৈয়দ রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার মতো রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো এদেশে গড়ে ওঠেনি। তাই অবশ্যই নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ। এখনো সময় আছে। আইন সংশোধন করে হলেও নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় দেশে আবারও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।’
সাম্প্রতিক ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় ইসলামী আন্দোলন
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘দেশজুড়ে দ্বিতীয় দফা ইউপি নির্বাচন চলছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রথম দফার মতো এই দফাতেও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু সরকারদলীয় স্থানীয় মাস্তানরা আগের দফার মতো এবারও মনোনয়ন ফর্ম জমাদানে বাধা, প্রার্থীদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভয়-ভীতি দেখানোসহ নানা রকম মাস্তানি করেই যাচ্ছে। আমরা মনে করিয়ে দিচ্ছি, আমরাও এই মাটির সন্তান। এখানে মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়া আমাদের অধিকার। এই অধিকার কেড়ে নিতে চাইলে পরিণতি ভালো হবে না।’
দ্রব্যমূল্য’র ঊর্ধ্বগতি
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার (আপার প্রোভার্টি রেট) বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। করোনায় বাংলাদেশে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে। আগের হিসাব যোগ করে গরিব মানুষের এই সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ কোটির বেশি।’
‘অন্যদিকে ক্যাবের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৬.৮৮%। গত ৩ বছরের ভেতর এটি সর্বোচ্চ। আর ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মতে, গত একমাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ১৯.৬৪%। একদিকে করোনার কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়া, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের এই সীমাহীন বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা’, বলেন সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের প্রধান কাজগুলোর একটি। কিন্তু সরকার এই দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মধ্যস্বত্ত্বভোগী তুলে দিতে হবে এবং উৎপাদক ও ভোক্তার মাঝে পণ্যের দামের পার্থক্য নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন করতে হবে। দেশের নীতি নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের আধিক্য কমাতে হবে। কারণ কল্যাণ রাষ্ট্র ও ব্যবসায়িক মুনাফা বিপরীতমুখী।’
দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলাম আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহজ্ব খন্দকার গোলাম মাওলা, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ আমনিুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আবদুল কাদের, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, কে এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, মাওলানা আহমদ আবদুুল কাইয়ূম, মাওলানা খলিলুর রহমান, উপাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা শেখ ফজুলল করীম মারুফ, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা নূরম্নল ইসলাম আল-আমীন, মুফতী হেমায়েতুল্লাহ, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, লুৎফুর রহমান, শওকত আলী হাওলাদার, আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলাম, আলহাজ আব্দুর রহমান, আলহাজ মনির হোসেন, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, মাওলানা মকবুল হোসাইন, আলহাজ সেলিম মাহমুদ প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/এমও