সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আহরণে ঢাকা কাস্টমের প্রবৃদ্ধি ২১.৭৯%
২৪ অক্টোবর ২০২১ ১০:১৬
ঢাকা: রাজস্ব আহরণে গতি বেড়েই চলেছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত ঢাকা কাস্টম হাউজের। আগস্ট মাসের তুলনায় হাউজটির রাজস্ব আহরণে গতি আরও বেড়েছে। যেখানে আগস্টে ঢাকা কাস্টম হাউজের রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, সেখানে সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ঢাকা কাস্টম হাউজ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। তথ্য বলছে, গত জুন মাস থেকেই এই কাস্টম হাউজে রাজস্ব বাড়ছেই।
ঢাকা কাস্টম হাউজ সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা কাস্টম হাউজের রাজস্ব আহরণ হয় ৩৩৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে আহরণ হয় ৩শ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, মার্চে আহরণ হয় ৩৭১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এর মধ্যে অবশ্য এপ্রিল মাসে রাজস্ব আহরণ কিছুটা কম ছিল। এ মাসে আহরণ হয় ৯১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। মে মাসে সেটি আবার বেড়ে হয় ১৯৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। জুন মাসে রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৩৪২ কোটি ২৩ লাখ টাকা, জুলাই মাসে ৪৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে জুলাইয়ের তুলনায় কিছুটা কমে ৩৭৬ কোটি ৪ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণ হলেও সেপ্টেম্বরে সেটি বেড়ে আবার দাঁড়িয়েছে ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ টাকায়।
এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাক কাস্টম হাউজের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ছিল ৩৯০ কোটি ৬১ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা, মার্চে ৪৬৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, এপ্রিলে ৪৩৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এরপর মে মাসে ৩৪৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, জুনে ৫৪২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, জুলাইয়ে ৩৩৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা ও আগস্টে রাজস্ব আহরণ হয় ৪৪৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর সেপ্টেম্বর মাসে সেটি আরও বেড়ে ৪৬৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণ হয়।
অন্যদিকে, ২০২০ সালের জানুয়ারির তুলনায় এ বছরের জানুয়ারিতে রাজস্ব আহরণে ঢাকা কাস্টমের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ১৭ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ, মার্চে ২৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগের বছরের এপ্রিলে রাজস্ব আহরণ একেবারেই কম হওয়ায় এ বছরের এপ্রিলে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয় রেকর্ড ৩৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ।
পরের মাসগুলোতেও প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত ছিল। আগের বছরের তুলনায় এ বছরের মে মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭৭ দশমিক ১৯ শতাংশ, জুন মাসে ৫৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জুলাই মাসে অবশ্য প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। আগের বছরের জুলাই মাসের তুলনায় এ বছরের মে মাসে রাজস্ব আহরণ হয় ২৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম। সেদিক থেকে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ফের প্রবৃদ্ধির ধারা ফিরে আসে। আগস্ট মাসে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, আর সেপ্টেম্বর মাসে সেটি আরও বেড়ে হয়েছে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
গত অর্থবছরের শেষের দিকে ভালো অবস্থানে থাকলেও নতুন অর্থবছরের শুরুতে কিছুটা খারাপ অবস্থানে চলে যায় ঢাকা কাস্টম হাউজের রাজস্ব আহরণের চিত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মধ্যে ঢাকা কাস্টম হাউজে কমিশনার হিসেবে মোহাম্মদ ফায়জুর রহমান যোগ দেওয়ার পর নতুন করে আবার পুরো হাউজকে ঢেলে সাজান। এমনকি ২০২১-২২ অর্থবছরের ঋণাত্মক রাজস্ব প্রবণতা সেপ্টেম্বর মাসে এসে রাজস্ব আহরণ বহুগুণ বেড়েছে।
শুধু তাই নয়, বর্তমান কমিশনার ঢাকা কাস্টম হাউজে রাজস্ব আহরণে তিনটি শাখায় বড় পরিবর্তন আনেন। ফ্রেইট শাখায় উপকমিশনার মোহাম্মদ আব্দুস সাদেককে পদায়ন করা হয়। একইসঙ্গে উপকমিশনার মোহাম্মদ আবদুস সাদেক ও ফ্রেইট গোয়েন্দা-তদারকি কমকর্তা রাজস্ব আহরণের প্রয়াসে কাজ করছেন। এমনকি ফ্রেইটে বাণিজ্যিক পণ্যের রাজস্ব আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়া উপকমিশনার সানোয়ারুল কবীরকে প্রিভেনটিভের দায়িত্বে দেওয়ায় গত এক মাসে দুই কোটি টাকার ওপর অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে ঢাকা কাস্টম হাউজ। আর সহকারী কমিশনার মো. বায়জিদ হোসেনকে কুরিয়ারে পদায়ন করায় কুরিয়ারে গতিশীলতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আহরণও বেড়ে চলেছে।
ঢাকা কাস্টম হাউজের প্রিভেনটিভ টিম হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অনেকগুলো সোনার চালান আটক করেছেন। সেখান থেকে কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। এছাড়া শুল্ক ফাঁকি দেওয়া কয়েকটি বড় চোরাচালান আটক করে মামলা দায়ের করেছে ঢাকা কাস্টম হাউজ। অন্যদিকে জালিয়াতির ঘটনায় একাধিক সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করেছে কাস্টম হাউজ। ফলে ঢাকা কাস্টম হাউজে বর্তমান কমিশনার যোগ দেওয়ায় যেমন আমূল পরিবর্তন এসেছে, তেমনিভাবে রাজস্ব আহরণেও গতি বেড়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফায়জুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ও চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশে ঢাকা কাস্টম হাউজ কাজ করে যাচ্ছে। চোরাচালান প্রতিরোধ করার পাশাপাশি অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে রাজস্ব আহরণে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকা কাস্টম হাউজ। রাজস্ব আহরণে বর্তমানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সামনে আরও ভালো করার দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।’
সারাবাংলা/এসজে/একে