শঙ্কায় তিস্তা পাড়ের কৃষক, ৩৫০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট
২৫ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৩১
লালমনিরহাট: অসময়ের হঠাৎ বন্যায় লালমনিরহাট জেলার সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ায় খাদ্য সংকটের শঙ্কায় কৃষক পরিবারগুলো। দুই দিনে বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। গত বুধবার হঠাৎ দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বন্যার পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু করে।
পানির চাপে ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাস ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যায় প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। বেশকিছু স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে তিস্তাপাড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার পানির চাপে কালীগঞ্জের কাকিনা-রংপুর সড়ক ধসে গিয়ে গংগাচওড়া শেখ হাসিনা সেতু পার হয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মহিষখোচা অংশের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। ভেসে গেছে বেশকিছু বাড়ি ঘর, হাজার হাজার পুকুরের মাছ।
গত বুধবার বন্যা শুরু হলেও পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা পরে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার অনেক নিচে নেমে আসে পানি। কম সময় স্থায়ী হলেও অসময়ের হঠাৎ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষিতে। হাজার হাজার হেক্টর জমির উঠতি ফসল বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে গেলে বন্যার ক্ষত ভেসে ওঠে বন্যা কবলিত এলাকায়।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৮৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও বাম্পার হয়েছিল। দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে আমন ধান ঘরে তোলা শুরু হতো। এরইমধ্যে বন্যায় ডুবে গেছে ২ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষেত।
এছাড়াও ভুট্টা ১৯২ হেক্টর, চিনা বাদাম ৫২ হেক্টর, সদ্য রোপণ করা আলু ৬৪ হেক্টর, মাসকালাই ৫ হেক্টর, মরিচ ৫ হেক্টর, পিঁয়াজ ১৬ হেক্টর ও ৯১ হেক্টর বিভিন্ন জাতের সবজি ক্ষেত বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে বন্যায় ৩ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।
গোবর্ধ্বন চরের চাষি শাহ আলম বলেন, ‘প্রায় লাখ টাকা খরচ করে ৭ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়োর চারা রোপণ করেছিলাম। চারাগুলো বেশ ভালোই হয়েছিল। এরই মধ্যে হঠাৎ বন্যা এসে সব ডুবে পচে নষ্ট হয়েছে।’
মহিষখোচা রজবপাড়া গ্রামের চাষি আশরাফুল আলম বলেন, ‘মাত্র ৫-৭ দিন পরে ২ বিঘা জমির আমন ধান ঘরে তোলা যেত। বন্যা এসে নষ্ট হলো আমন ধান। খরচ তোলা তো দূরের কথা ঋণের টাকা পরিশোধ আর পরিবারের খাদ্য যোগান নিয়ে পড়েছি চরম দুঃশ্চিন্তায়।
একই গ্রামের আজিজ মিয়া বলেন, ‘৪ বিঘা জমির আমন ধান কেটে রোদে শুকাতে দিয়েছি। দুই দিন পরে বেঁধে বাড়িতে নেওয়ার কথা। এমন সময় বন্যায় সব ভেসে গেছে। স্বপ্নেও ভাবিনি এসময়ে এত বড় বন্যা হবে। এখন খাবো কি? সেই চিন্তায় ঘুম আসে না।’
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, ‘হঠাৎ বন্যায় ৩ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল ডুবে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মধ্যে ১২ শতাংশে আংশিক ফসল পাওয়া যেদে পারে। সেক্ষেত্রে চাষিদের জমি থেকে কচুরি পানা ও আবর্জনা সরানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।’ সরকারিভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
সারাবাংলা/এমও