৩ ভাই মিলে ‘চোর চক্র’, ঘটিয়েছে ৪০০ চুরি!
২৫ অক্টোবর ২০২১ ১৮:১৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে একটি বাসায় বড়ধরনের চুরির ঘটনায় আপন তিন ভাইয়ের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চুরির মালামাল হেফাজতে রাখায় এক ভাইয়ের স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তিন ভাই মিলে চট্টগ্রাম শহরে গড়ে তুলেছিল চোর চক্র। তাদের এক ভাই ‘বডিবিল্ডার’, যে নিজের হাতে জানালার লোহার গ্রিল বাঁকা করে ফেলতে সক্ষম। গত পাঁচ বছরে তিন ভাই মিলে চট্টগ্রাম শহরে অন্তত চারশ’ চুরি করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
তিন ভাই হলো- ইব্রাহিম খলিল (২৭), মো. মঈনউদ্দিন (৩২) ও মো. রহিম (৩০)। চুরির ঘটনার পর ইব্রাহিম খলিলকে গত ১৩ অক্টোবর নগরীর নাসিমন ভবনের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী রোববার (২৪ অক্টোবর) রাতে মঈনউদ্দিনকে নগরীর কাজীর দেউড়ি এবং রহিমকে তুলাতলী থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চুরির ঘটনায় জড়িত এক রিকশাচালক মো. জাহাঙ্গীরকে (৩০) নগরীর ব্যাটারি গলি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মঈনউদ্দিনের স্ত্রী মোছাম্মৎ নয়ন তারাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন সারাবাংলাকে জানান, গত ১১ অক্টোবর গভীর রাতে নগরীর এস এস খালেদ রোডে এবিসি মাহবুব হিলস ভবনে আবরারা বেগম নামে এক নারীর বাসায় চুরি হয়। ভবনের তৃতীয় তলার বাসায় শয়নকক্ষের জানালাল গ্রিল বাঁকা করে প্রবেশ করে আলমারি থেকে নগদ তিন লাখ টাকা, ৩ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার, ৩৫টি হীরার আংটি, আটটি হীরার কানের দুল, সোনা ও হীরা মিশ্রিত ৫টি হাতের বড় চুড়ি নিয়ে যায়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের হয়।
ওসি নেজাম উদ্দীন বলেন ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এবং বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা প্রথমে ইব্রাহিম খলিলকে গ্রেফতার করি। সে স্বীকার করে যে, তারা তিন ভাই ও রিকশাচালক জাহাঙ্গীর মিলে ওই বাসায় চুরি করেছে। এরপর আমরা ইব্রাহিমের আরও দুই ভাই, রিকশাচালক জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করি। তিন ভাইয়ের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। সেখানে বড় ভাই মঈনউদ্দিনের স্ত্রী থাকেন। চুরির পর কিছু মালামাল তারা গ্রামের বাড়িতে রেখে আসেন। সেই মালামালসহ আমরা ওই নারীকেও গ্রেফতার করেছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নয়ন তারা এবং চট্টগ্রাম নগরীতে গ্রেফতার রহিম ও জাহাঙ্গীদের হেফাজত থেকে চুরি করা নগদ এক লাখ ৫ হাজার টাকা, ৭০০ মার্কিন ডলার, ১৫টি হীরার আংটি ও আটটি কানের দুলসহ আরও কিছু গহনা উদ্ধার করা হয় বলে জানান ওসি।
নেজাম উদ্দীন বলেন, ‘তিন ভাইয়ের সঙ্গে চুরির চক্রে রিকশাচালক জাহাঙ্গীরও রয়েছে। জাহাঙ্গীর একটি ছিনতাইয়ের মামলায় আট বছর জেল খেটে মাসখানেক আগে বের হয়েছে। এরপর আবার চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় মঈনউদ্দিনও একাধিকবার জেল খেটেছে। সে নিয়মিত শরীরচর্চা করে। ছোট পাইপ বেয়ে উঠে শরীরের শক্তিতে লোহার গ্রিল বাঁকা করার বিশেষ দক্ষতা আছে তার। সে চুরি করতে বাসায় ঢোকে। তাদের দুই ভাই রাস্তায় পাহারা দেয়। এভাবে তিন ভাই মিলে গত পাঁচবছরে তারা কমপক্ষে চারশ’ চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তবে গ্রেফতার এড়াতে তারা মোবাইল বা কোনো ধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস চুরি করে না।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম