বায়োপসির জন্য খালেদা জিয়ার অস্ত্রোপচার
২৫ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৫২
ঢাকা: বায়োপসির জন্য সফল অস্ত্রোপচারের পর এখন সুস্থ আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠানো দরকার বলে মনে করছে বিএনপি।
সোমবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে গুলেশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার সবশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরিষ্কার, স্বচ্ছ, সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রেস কনফারেন্স। আপনারা নিশ্চিত থাকুন, বেগম খালেদা জিয়া এখন একদমই সুস্থ আছেন। কিছুক্ষণ আগে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে কথা বলেছেন, তার ভাই (শামীম এস্কান্দার) কথা বলেছেন এবং আমাদের দু’জন ডাক্তার, যারা এই মুহূর্তে আমার পাশে আছেন, তারা নিশ্চিত করেছেন যে তিনি এই মুহূর্তে সুস্থ আছেন। শি ইজ আউট অব এভরিথিং। অর্থাৎ বিপদের কোনো আশঙ্কা নেই বলে তারা মনে করেন।’
আরও পড়ুন- খালেদা জিয়া শঙ্কামুক্ত, তবে বিদেশ নেওয়া প্রয়োজন: ফখরুল
খালেদা জিয়ার সবশেষ অবস্থা তুলে ধরে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘তার শরীরের এক জায়গায় ছোট একটি লাম্প আছে। এই লাম্পের ন্যাচার অব অরিজিন জানতে হলে বায়োপসি করা প্রয়োজন। সেটি করার জন্যই তাকে ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তার লাম্প থেকে টিস্যু স্যাম্পল নেওয়া হয়েছে।’
‘বায়োপসির জন্য যে অস্ত্রোপচার, সেটি করার পর তিনি সুস্থ আছে। তিনি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পেরেছেন, উনার খোঁজ নিয়েছেন। ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমানের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন,’— বলেন এ জে ড এম জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘অস্ত্রোপচার পরবর্তী তার সব প্যারামিটারগুলো এই মুহূর্তে স্ট্যাবল আছে। তিনি সার্জিক্যাল আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। আপনারা সবাই দোয়া করবেন। উনি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন, যেন অতি দ্রুত সুস্থ এবং দেশের বাইরে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে আপনারা যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বায়োপসি মানে চিকিৎসা না। বায়োপসি একটি ডায়াগনস্টিক প্রসেসের অংশ। পরবর্তী চিকিৎসা কী হবে, সেটি এই প্রসেসের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হবে। তার বয়স ৭৬ বছর। তার আরও কিছু জটিলতা আছে। সেগুলো মাথায় রেখে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে তার জন্য একটি ডেডিকেটেড ডেভেলপড সেন্টার প্রয়োজন রয়েছে বলে এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড প্রাইমারিলি অপিনিয়ন দিয়েছে।’
লাম্প কী— জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে লাম্প বলে। এর অর্থ ছোট এক ধরনের চাকা। আকৃতিতে এটি ১.২ সেন্টিমিটারের কাছাকাছি হয়ে থাকে।’
খালেদা জিয়ার শরীরের কোথায় লাম্প— জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি একটি এথিক্সের কথা বলি। প্রতিটি রোগীর প্রাইভেসি বলে একটি বিষয় রয়েছে। ইউ কান্ট সে, কোথায় কী হয়েছে না হয়েছে। যতটুকু বলার, আমরা বলেছি। আমরা আশা করি, এ বিষয়ে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।’
বায়োপসি পরীক্ষার রিপোর্ট কবে নাগাদ পাওয়া যাবে— জানতে চাইলে ডা. জাহিদ বলেন, ‘বায়োপসির রেজাল্ট পেতে ন্যূনতম ৭২ ঘণ্টা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫ দিন থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সময় লাগে আমেরিকার মতো জায়গায়। কাজেই বায়োপসির রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
আরও পড়ুন- খালেদার শারীরিক অবস্থার অবনতি, ঢাকায় কোকোর স্ত্রী
খালেদা জিয়ার অবস্থা খুব খারাপ বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এত দায়িত্বজ্ঞানহীন মিডিয়া কেন হবে? হোয়াই? দে মাস্ট কনফার্ম, জিজ্ঞাসা করতে হবে যারা কাজ করছেন তাদেরকে। আমাকে অথবা চিকিৎসকদের। তা না করে একটা কিছু বলে দিলেই হয়ে গেল? এটা ঠিক না। এটি এক ধরনের হাইপার জার্নালিজম।’
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররা বার বার বলে আসছেন, তার মেডিক্যাল বোর্ড বলে আসছেন— তার যে মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি ডিজিস আছে, এগুলোর পরিপূর্ণ চিকিৎসা এখানো করানোর কোনো অ্যাডভান্সড সেন্টার নেই। এজন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এমন একটি দেশে বাস করি যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর যে সাধারণ মানুষের মতো চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে, সেই অধিকারটুকু সরকার স্বীকার করেনি। তাকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমি আবার বলছি— শি নিডস অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট, ইন অ্যান অ্যাডভান্স সেন্টার। এটা খুব প্রয়োজন। তার জন্যে আইনি কোনো বাধা আছে বলে আমরা মনে করি না। কারণ শি ইজ এনটাইটেলড টু বি গ্র্যান্টেড বেইল। কেন জামিন পাবেন না? এটি তার অধিকার, এটি কোনো দয়া নয়। কারণ এ ধরনের একটি মিথ্যা মামলা, তারপরও এই মামলায় জামিন পাওয়া তার অধিকার। সরকারের উচিত অবিলম্বে তাকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া।’
খালেদা জিয়া এই মুহূর্তে যে অবস্থায় আছেন, তাতে তার কোনো কিছু হয়ে গেলে সে দায়-দায়িত্ব কার— এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শতকরা একশ ভাগ সরকারের ওপর দায় পড়বে। কারণ, তিনি তো এখনো সরকারের কাস্টডিতে আছেন। দায়-দায়িত্ব এড়াবার চেষ্টা করে লাভ হবে না। আপনারা তো তাকে স্থায়ী জামিন দেননি, ছয় মাস পরপর বলছেন, স্থগিত করা হলো। স্থগিত করার তো কোনো যুক্তি নেই। হয় তাকে পুরোপুরি মানা করে দেবেন, না হয় তাকে নিয়ে আসবেন। তার যে শারীরিক অবস্থা, এতে সরকারেরই উচিত অবিলম্বে তার বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করা।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
খালেদা জিয়া টিউমার বায়োপসি বিএনপি চেয়ারপারসন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লাম্প