বিমানে বেতন বৈষম্য নিয়ে পাইলটদের অসন্তোষ, ফ্লাইট পরিচালনায় ‘না’
২৫ অক্টোবর ২০২১ ২৩:৫১
ঢাকা: বেতন-ভাতা নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে ফ্লাইট পরিচালনায় অপারগতা জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলটরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণকালীন তাদের বেতন ইচ্ছামাফিক কেটে রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। ওভারটাইমের বদলে মূল বেতনের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কেটে রাখা হয় ওই সময়। সবশেষ বিমানের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা জুলাইয়ে সমন্বয় করা হলেও পাইলটদের বেতন আর সমন্বয় করা হয়নি। সে কারণেই বেতন সমন্বয়ের দাবি জানিয়ে ফ্লাইট পরিচালনায় অনীহার কথা জানিয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার (২৫ অক্টোবর) বিমানের দোহাগামী সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার ফ্লাইট এবং দুবাইগামী সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার ফ্লাইট অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। দুই ফ্লাইটের জন্য নির্ধারিত পাইলটরা অপারগতা প্রকাশ করায় ফ্লাইট দুইটি নির্ধারিত সময়ে ছেড়েও যেতে পারেনি। পরে পাইলট নিয়ে আসার পর দোহাগামী ফ্লাইট রাত সাড়ে ৯টায় ও দুবাইগামী ফ্লাইট রাত সোয়া ৮টায় ছেড়ে গেছে শাহজালাল বিমানবন্দর।
বাংলাদেশ বিমানের একাধিক পাইলটের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যদের সঙ্গে তাদের বেতন-ভাতাও গত দেড় বছর ধরে কেটে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্য গত জুলাইয়ে বিমানের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সমন্বয় হয়েছে। কিন্তু পাইলটদের বেতন-ভাতা সমন্বয় করা হয়নি ওই সময়। এ নিয়ে জুলাইয়েই পাইলটদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলে বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনসহ পাইলটরা বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু সালেহ মোস্তফা কামালের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তখন বিমান সিইও আগস্ট মাসে পাইলটদের বেতন-ভাতা সমন্বয়ের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত সেটি করা হয়নি বলে অভিযোগ পাইলটদের।
ভুক্তভোগী পাইলটরা আরও বলছেন, এখনো তাদের বেতন-ভাতার ৪৮ শতাংশ কেটে রাখা হচ্ছে। এদিকে, তাদের মাসে ৭৫ ঘণ্টা ফ্লাই করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চাকরি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ন্যূনতম এই ৭৫ ঘণ্টার বাইরে মাসে আর কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করতে তারা রাজি নন। কেননা, বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনা করলে তাদের ওভারটাইম পাওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু ওভারটাইম তো দূরের কথা, বেতনের কেটে নেওয়া টাকাই সমন্বয় করা হচ্ছে না এবং এখনো বেতন কেটে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, করোনা সংক্রমণের মধ্যে বিমানের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বাড়লেও পাইলটদের বেতন বাড়েনি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে পাইলটরা ফ্লাইট পরিচালনায় অস্বীকৃতি জানালে বিপাকে পড়তে হবে বিমানকে। এরই মধ্যে সোমবার দোহা ও দুবাইগামী দু’টি ফ্লাইট দেরি করায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখন পাইলটরা বেঁকে বসলে ফ্লাইট বিপর্যয় দেখা দেবে। তখন বিমানের শিডিউল ভেঙে পড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, বিমানের সিইও’র সঙ্গে পাইলটদের বেতন বৈষম্য নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তখন তিনি আগস্টের মধ্যেই তাদের বেতন সমন্বয় করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি। পাইলটদের বেতন এখনো সমন্বয় করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, মূল বেতন সমন্বয় করা তো হচ্ছেই না, উল্টো ওভারটাইমও বন্ধ রয়েছে। অথচ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তীব্র থাকার সময়ও পাইলটরা বিভিন্ন দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। এত ঝুঁকি নিয়ে ফ্লাই করার পরও তাদের বেতন কেটে রাখা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটি মেনে নিলেও এখনো তাদের বেতন সমন্বয় না করাটা দুঃখজনক। বিশেষ করে অন্যদের বেতন সমন্বয় হয়ে গেলেও পাইলটদের বেতন সমন্বয় না করার বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো নয়।
ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলেন, পাইলটরা অতিরিক্ত কাজ করবেন না। তারা নির্ধারিত সময়ে কাজ করবেন। অতিরিক্ত কাজ করাতে হলে মূল বেতনের পাশাপাশি ওভারটাইমও দিতে হবে। আমরা এই সমস্যার যৌক্তিক সমাধান চাই।
এ বিষয়ে পাইলটদের পক্ষ থেকে পরবর্তী কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না— জানতে চাইলে বাপা সভাপতি বলেন, বিমান ডাকলে আমরা কথা বলব। আর পাইলটদের অসন্তোষ তো ব্যক্তিগত নয়। সবার বেতন সমন্বয় করা হলেও পাইলটদের বেতন সমন্বয় করা হচ্ছে না— এটি কীভাবে যৌক্তিক হয়? পাইলট ছাড়া বিমান কীভাবে চলবে? অথচ সেই পাইলটদেরই বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ বিমানের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামালকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) তাহেরা খন্দকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
সারাবাংলা/এসজে/টিআর
পাইলটদের অসন্তোষ বাংলাদেশ বিমান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বেতন বৈষম্য বেতন সমন্বয়