‘যথাসময়ে’ই আসবে শীত
২৬ অক্টোবর ২০২১ ২৩:২৫
ঢাকা: মধ্য কার্তিকের এই সময়টায় এসে অনেকেই প্রহর গুনছেন শীতের অপেক্ষায়। এখনো কেন শীত আসছে না— তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা অনেকের মধ্যেই। কিন্তু আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, শীত আসার সময় এখনো হয়নি। আর গত বছর কিছুটা আগেভাগে চলে এলেও এবার যথাসময়েই আসবে শীত।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাধারণত বঙ্গোপসাগরে সাইক্লোন বা কোনো নিম্নচাপ না থাকলে বাংলাদেশে শীত শুরু হয় নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বা শেষের দিকে। তবে গত বছর নভেম্বরের শুরু থেকেই ভোরে হালকা কুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস আর রাত গভীর হলে শীতের অনুভূতি হচ্ছিল। এবারে নভেম্বরে বঙ্গোপসাগরে কোনো সাইক্লোন বা লঘুচাপের পূর্বাভাস না থাকায় যথাসময়েই আসবে শীত।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য বলছে, আজ মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস— দু’টিই গোপালগঞ্জে। সাধারণত তাপমাত্রা যখন টানা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বার তার নিচে নেমে আসে, তখনই শীত বলে ধরে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক সারাবাংলাকে বলেন, দেশে এখনো সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। অক্টোবর ও নভেম্বরে সাধারণত গরম থাকে। এসময়ে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকে। আবার কখনো কখনো এই সময়ে সমুদ্রে সাইক্লোন তৈরি হয়, যার প্রভাবে শীতের আগমন পিছিয়ে যায়। এ বছর এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো পূর্বাভাস নেই। নভেম্বরেও কোনো সাইক্লোন তৈরি হবে কি না, সেটিও এত তাড়াতাড়ি বলা যাচ্ছে না। তাই শীতের আমেজ পেতে পেতে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের পর বা শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বছরের ১২ মাসকে বাংলায় ছয়টি ঋতুতে ভাগ করা হলেও আবহাওয়াবিদরা মূলত চারটি ঋতু হিসাব করে থাকেন। তাদের হিসাবে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাস ‘প্রি-মনসুন’ জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার মাস ‘মনসুন’, অক্টোবর ও নভেম্বর ‘পোস্ট মনসুন’ এবং ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস ‘উইন্টার’। এই পোস্ট মনসুনের শেষ ভাগে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পেরিয়ে দেখা দেয় শীতের আভাস, যদি বঙ্গোপসাগরে কোনো ধরনের নিম্ন বা লঘুচাপ তৈরি না হয়।
আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই সময়ে অর্থাৎ নভেম্বরের শেষ দিকে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে শীতল ও শুষ্ক বাতাস চলে আসে ভারতীয় উপমহাদেশে। সেই বাতাস হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশে। আর তখনই মূলত শুরু হয় শীত।
আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক বলেন, হিমালয় থেকে শীতল সেই বাতাসের একটি অংশ বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিলেট অঞ্চল দিয়ে, একটি অংশ রংপুর অঞ্চল দিয়ে। এ কারণে এই দুই অঞ্চলে দেশের অন্য যেকোনো এলাকায় তুলনায় আগে শীতের অনুভূতি আসে। আর এই প্রক্রিয়াটি মূলত ঘটে থাকে নভেম্বরের ২০ তারিখের আশপাশে।
নাজমুল হক আরও বলেন, বাংলাদেশে শীতের অনুভূতি নির্ভর করে জলীয়বাষ্পের পরিমাণের ওপর। জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম থাকলে শীতের অনুভূতি বেশি হয়, আর বেশি থাকলে শীতের অনুভূতি কম হয়। এ কারণে বাংলাদেশে বর্ষাকালে শীত অনুভূত হয় না। অন্যদিকে শীতকালে জলীয়বাষ্প একেবারেই কম— ৪০ থেকে ৫০ শতাংশে নেমে আসার কারণে শীতের অনুভূতি হয়। এছাড়াও শীতকালে সূর্য কিছুটা হেলে থাকার কারণেও শীত লাগে।
অক্টোবরের শেষেও শীতের অনুভূতি নেই। দিনে তো বটেই, রাতেও বেশ গরম। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ঋতু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দুয়েক সপ্তাহ সময়ের হেরফের স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশে শীতের আগমনের সময় পিছিয়েছে কি না কিংবা কতটা পিছিয়েছে, সে বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। এরকম কোনো গবেষণা আমাদের নেই বলে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা দেখে আসছি, নভেম্বরের মাঝামাঝি পেরিয়ে গেলেই শীতের শুরুটা ঘটে বাংলাদেশে।
“প্রতিবছর ৩১ মে দেশে দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় ‘মনসুন’ শুরু হয় টেকনাফ থেকে। সেটি কক্সবাজারে ১ জুন ও চট্টগ্রামে ২ জুন থেকে শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু কখনো কখনো এই সময় ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত হেরফের হতে পারে। এই পরিবর্তনটুকু দেখিয়ে পরিবেশ বদলে গেছে, সেটি বলা যায় না,”— যোগ করেন এই আবহাওয়াবিজ্ঞানী।
আবহাওয়াগত কারণ ছাড়াও নগরায়নের ফলে শীতের অনুভূতি কম হচ্ছে বলেও মনে করেন নাজমুল হক। তিনি বলেন, ঢাকায় গত ৩০ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ফসিল ফুয়েল পোড়ানোর পরিমাণও অনেক বেড়ে গেছে। আর যেসব এলাকায় ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ব জ্বালানি পোড়ানো হয়, সেসব এলাকায় গরমের অনুভূতিও কিছুটা বেশি থাকে। তাই ঢাকার আবহাওয়ার চিত্র দিয়ে সারাদেশের আবহাওয়ার চিত্র বোঝা যাবে না।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর