ফেসবুক-ইউটিউব এখন আমাদের কথা শুনছে: মোস্তফা জব্বার
২৭ অক্টোবর ২০২১ ১৫:০৩
ঢাকা: আমেরিকার দুই প্রতিষ্ঠান ফেসবুক–ইউটিউব আগে আমাদের কথা শুনত না। এখন তারা আমাদের কথা শুনছে। সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। তারা তাদের কমিউনিটি উপযোগী করে ফেসবুক–ইউটিউব চালায়। আমরা বলেছি, বাংলাদেশে ফেসবুক–ইউটিউব চালাতে হবে বাংলাদেশের কমিউটি উপযোগী করে। এ ব্যাপারে আমরা তাদেরকে কড়া ভাষায় চিঠি দেব।
তবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পেছনে ফেসবুক ইউটিউবকে এককভাবে দায়ী করা যাবে না। যখন দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দাপট ছিল না, তখনও এ ধরনের (সাম্প্রদায়িক হামলা ও গুজব) ঘটনা ঘটেছে। এগুলো রোধ করার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা।
বুধবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’– এ এসব কথা বলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, ‘আমরা সামগ্রীকভাবে শুরু থেকে যে কথাটা বলে আসছি, আমাদের দায়িত্ব ডিজিটাল মহাসড়ক নির্মাণের। এই মহাসড়ক নির্মাণের দায়িত্বটা আন্তরিকতার সাথে পালন করার চেষ্টা করছি এবং আমরা ভবিষ্যতে নিজেরাও যাতে নিরাপদ থাকতে পারি, সেও চেষ্টাটাও করছি। এরইমধ্যে আলোচনায় এসেছে যে, আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রশ্নে সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে আছি এবং সোস্যাল মিডিয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে।’
‘আমরা অনেক আগে থেকে লড়াই করছিলাম– আমরা ডিজিটাল হচ্ছি, একই সঙ্গে আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগী হবো। আমরা যতো বেশি ডিজিটাল হবো, ততো বেশি ডিজিটাল নিরাপত্তার দিকটা থাকবে। এই যে, সামাজিক যোগাযোগ নির্ভর কিছু গুজব রটানো অথবা সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কথা বলছেন, এটি একটি দিক মাত্র। আমার লেন–দেন, ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু যখন ডিজিটাল তখন আমার তথ্যের নিরাপত্তা যদি দিতে না পারি, তাহলে ডিজিটালাইজেশন তো উলটো আমার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে’– বলেন মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের আইন, যা আমরা ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ হিসেবে সংসদে পাস করেছি, সেই আইনের আওতায় যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেগুলো আমরা নেব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হয় এবং এই অপব্যবহারগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত। অবশ্য এটা শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই নয়, অন্য আইনের ক্ষেত্রেও হয়। এ ক্ষেত্রে যদি আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ নজর দেয়, তাহলে এই অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব।’
‘আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি, কোনো ভাবেই এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হওয়া উচিত না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য, নিরাপত্তা হরণ করার জন্য নয়’–বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় সংকট স্যোসাল মিডিয়া তথা ফেসবুক–ইউটিউব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সংকট কেবল বাংলাদেশের না, সারা বিশ্বের। কারণ, এই দু’টি কোম্পানিই অ্যামেরিকান এবং অ্যামেরিকান কোম্পানিগুলো তাদের মতো করে ব্যবসা–বাণিজ্য করে। এ ক্ষেত্রে তারা তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার ফলো করে। কমিউনিটি স্ট্যান্ডার মানে অ্যামেরিকান সমাজ ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে তারা নির্দেশনা তৈরি করে রাখে, সেই নির্দেশনা লংঘন যদি হয়, তখন তারা ব্যবস্থা নেয়।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘কিন্তু তারা এটা লক্ষ্য করে না যে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, সম্প্রদায়িকতা– এগুলো যদি মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে তাদের কিছু ভূমিকা পালন করা দরকার। প্রথম দিকে এই গুলো তারা বুঝতেই পারেনি। আমরা ২০১৮ সাল থেকে শুরু করে এখন আমরা একটা অবস্থানে আসছি, তাদের সাথে প্রতি মুহূর্তে আমাদের যোগাযোগ হয় এবং আগের যে অবস্থাতে ছিল, সেই অবস্থা থেকে কিন্তু পরিবর্তিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এইবার যখন কুমিল্লার ঘটনা ঘটে এবং তার পরবর্তীতে যখন ঘটনাগুলো ঘটেছে তখন আমরা ৩০০ লিংকে রিপোর্ট করেছি। তারা ৩০০ লিংকের ভেতরে ২৬৪ টা বন্ধ করেছে। আগে হয়তো ১০/১৫ টা বন্ধ করত। অর্থাৎ তারা আগে আমাদের কথা সেভাবে শুনত না, এখন শুনছে। সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘তারা (ফেসবুক–ইউটিউব) এরইমধ্যে বাংলাদেশে কর নিবন্ধিত হয়েছে, ভ্যাট দিচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য একজন বিশেষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। আমি প্রত্যাশা করি যে বাংলাদেরে রীতিনীতি এবং বাংলাদেশের জনগণের আকাঙক্ষা মেনে নিয়েই তারা এখানে কাজ করবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে যে প্রযুক্তি আছে, সেই প্রযুক্তি দিয়ে কিন্তু আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। কোনো সাইট যদি বন্ধ করার প্রয়োজন হয়, সেটা আমরা নিজেরাই বন্ধ করতে পারি। এটা আমরা ডাক ও টেলিযোগাযোগ থেকেই করতে পারি। স্যোসাল মিডিয়ার ক্ষেত্রেও আমরা প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করেছি। আমরা ইচ্ছে করলে এখন ফেসবুকের ছবি বন্ধ করতে পারব, ইচ্ছে করলে ফেসবুকের ভিডিও বন্ধ করতে পারব। ইউটিউবের লাইভ বন্ধ করতে পারব, ফেসবুকের লাইভ বন্ধ করতে পারব।’
‘কিন্তু ফেসবুক ইউটিউব বন্ধ করে দেওয়া একমাত্র সমাধান নয়। মাথা ব্যথা হয়েছে, ওষুধ দিয়ে সারাতে হবে। কেটে ফেলা যাবে না। আমরা এখন পর্যন্ত ফেসবুকের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছি, তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমাদের জন্য খুশির বিষয় হলো– তারা এখন বুঝে ফেলেছে বাংরাদেশের বাজারটা বিশাল। চার কোটির ওপরে মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। এ থেকে তাদের বিশাল আয়। দিন দিন তাদের আয় বাড়ছে। তারা পরিস্থিতি উপলব্দি করছে। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি একদিন আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ীই তারা চলবে’– বলেন মোস্তাফা জব্বার।
সারাবাংলা/এজেড/এনএস
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ফেসবুক-ইউটিউব