জাতীয় ঈদগাহে বাসেত মজুমদারের জানাজা সম্পন্ন
২৭ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৪০
ঢাকা: জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রবীণ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত জানাজায় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
জাতীয় ঈদগাহ থেকে তার মরদেহ পুরাতন বিমান বন্দরে নেওয়া হবে। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে লাশ কুমিল্লা আইনজীবী সমিতিতে নেওয়া হবে। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে। সেখানেই দাফন করা হবে।
জাতীয় ঈদগাহে বাসেত মজুমদারের জানাজার আগে শোক প্রকাশ করে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আবদুল বাসেত মজুমদারের ছেলে সাঈদ আহমেদ রাজা।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
জানাজা শেষে আবদুল বাসেত মজুমদারের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।
এর আগে সকালে বনানী সোসাইটি জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
পরে দুপুর সোয়া একটায় তার লাশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আনা হয়। সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের ভেতরের উন্মুক্ত চত্তরে জানাজা হওয়ার কথা থাকলেও লোক সংকুলান না করতে পেরে প্রধান বিচারপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপসের পরামর্শে জাতীয় ঈদগাহে জানাজার আয়োজন করা হয়।
এর আগে বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ৮টা ১৮ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা যান বাসেত মজুমদার।
মৃত্যুকালে বাসেত মজুমদার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, শুভাকাঙ্খী রেখে গেছেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর আবদুল বাসেত মজুমদার অসুস্থ হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কয়েকদিন পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) তিনি আবার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সোমবার (২৫ অক্টোবর) তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে মেরুদণ্ডের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি।
তিনি ১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি, কুমিল্লার লাকসাম (বর্তমানে লালমাই) উপজেলার শানিচোঁ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আব্দুল আজিজ মজুমদার, মা জোলেখা বিবি। স্থানীয় হরিচর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক (এসএসসি) এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএ (এইচএসসি) ও বিএ পাস করেন তিনি। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৬৬ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এরই মধ্যে তিনি তার আইনজীবী পেশায় ৫৬ বছর অতিক্রম করেছেন।
জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবীর বড় ছেলে গোলাম মহিউদ্দিন আবদুল কাদের ব্যবসা করে। ছোট ছেলে অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমদ রাজা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। দুই মেয়ের মধ্যে ফাতেমা আক্তার লুনা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। সর্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিউজিকে পড়াশোনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছে। ছোট মেয়ে খাদিজা আক্তার ঝুমা উত্তরা মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবদুল বাসেত মজুমদার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আবদুল বাসেত মজুমদার দুস্থ আইনজীবীদের জন্য নিজের নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছেন। দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতিতে এই ফান্ড থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘ পেশাজীবনে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে আইনি সহায়তা দিয়েছেন তিনি।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এসএসএ