স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে বাদ দিতে সাবেক ৭ ছাত্রলীগ নেতার চিঠি
২৭ অক্টোবর ২০২১ ২২:১২
ঢাকা: মানিকগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়া মো. আবুল বাশারের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাত নেতা। এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে তারা আবুল বাশারকে ‘মাদক ব্যবসায়ী, কিশোর গ্যাংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও বিতর্কিত ব্যক্তি’ বলে অভিহিত করেন।
সোমবার (২৫ অক্টোবর) আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে ছাত্রলীগের সাবেক সাত নেতা ওই চিঠি পাঠিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বুধবার (২৭ অক্টোবর) সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে সই করেছেন— মানিকগঞ্জ জেলার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক খান তুষার, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. সেলিম পারভেজ, মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরি রানা, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিদুজ্জামান মহিদ, মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যডভোকেট সাদিকুল ইসলাম সোহা, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক রুবেল ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ইনামুল হক সাকিব।
চিঠিতে সই করা মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদিকুল ইসলাম সোহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা চিঠি জমা দিয়েছি তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। সবাই ছাত্ররাজনীতি করতাম। আমরা জেনেছি, মানিকগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হবে। কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে তিন থেকে চার মাস হলো স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয় আবুল বাশার। এর আগে একসময় সে মানিকগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দফতর সম্পাদক ছিল। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে আবার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারও করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১৭ সালে মানিকগঞ্জের অবৈধ মাদক ও চোরাকারবারিদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, সেই তালিকায় তার তার নাম রয়েছে। মানিকগঞ্জের ১১ জনের তালিকায় তার নাম রয়েছে তিন নম্বরে। কমিটিকে ঘিরে আমরা সাত জনও সক্রিয় রয়েছি। সে-ও সক্রিয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একজন মাদক কারবারির সঙ্গে আমরা রাজনীতি করব না। সে যদি কমিটিতে আসে, আমরা ওই কমিটিতে থাকব না। সেটি দলকে জানিয়েছি চিঠির মাধ্যমে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে অ্যাডভোকেট সাদিকুল ইসলাম সোহা বলেন, ‘কেবল রাজনীতি নয়, আওয়ামী লীগের একটি ঐহিত্য আছে। সেই ঐতিহ্যে কালিমা লেপন করবে মাদক কারবারিরা, সেটি হতে দেওয়া যায় না। সে কারণেই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে চিঠি দিয়েছি। এর আগে আমরা আলাদা আলাদাভাবে চিঠি দিয়েছিলাম। তবে এবার একসঙ্গে চিঠি দিয়েছি। চিঠিটি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গ্রহণ করে আমাদের আলাদা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করেছেন, আমরা প্ররোচিত হয়ে এই চিঠি দিয়েছি কি না। সভাপতির কাছে আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কর করেছি। এ কারণে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন স্থগিত হয়েছে।’
মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরি রানা জানান, সম্মিলিতভাবেই তারা চিঠি দিয়েছেন। লিখিত বক্তব্যে সব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক রুবেল জানান, চিঠির বিষয়ে অবগত রয়েছেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীরা ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার রাজনীতিতে যুক্ত। আমরা দীর্ঘদিন ধরে মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগে যুক্ত থেকে দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমরা সুনামের সঙ্গে ছাত্রলীগ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার রাজনীতি থেকে সাবেক হওয়ার পর আওয়ামী লীগের অন্যতম ঐহিত্যবাহী সহযোগী সংগঠন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার রাজনীতিতে যুক্ত হই। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই আদর্শিক সংগঠনকে বিতর্কিত ও কালিমা লেপনের উদ্দেশ্যে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়েছে মো. আবুল বাশার। তিনি মানিকগঞ্জের শীর্ষ মাদক কারবারি ও কিশোর গ্যাংয়ের প্রতিষ্ঠাতা, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও বাংলাদেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব অর্জন দেশ ও জনস্বার্থবিরোধী লোকের কারণে বিলীন হতে বসছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার রাজনীতির সঙ্গে মো. আবুল বাশারকে না রাখতে এবং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তৈরি করা অবৈধ মাদক চোরাকারবারি ও সরবরাহকারীর তালিকাতেও আবুল বাশারের নাম দেখা গেছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির কাছে জমা দেওয়া চিঠির একটি অনুলিপিও সারাবাংলার হাতে এসেছে।
মন্তব্য জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবুল বাশার সারাবাংলাকে বলেন, ‘শত্রুতা থেকে তারা চিঠি দিয়েছে। আমার নামে কোনো মামলা নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে তারা এটি করেছে। এ কারণে ভবিষ্যতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে আমার সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ সারাবাংলাকে বলেন, চিঠিটি আমি পেয়েছি। সাবেক সাত ছাত্রলীগ নেতা চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু সে (আবুল বাশার) যে মাদক ব্যবসায়ী, তা আমি বলতে পারব না। কারণ তার নামে মাদকের মামলা নেই। কেউ মাদকসহ ধরা পড়লে কিংবা কারও নামে মাদকের মামলা থাকলে তাকে কমিটিতে রাখা হবে না। আবার যে মাদক ব্যবসায়ী না, তার দায়ও আমি নেব না। সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলে কাউকে মাদক ব্যবসায়ীও বলব না। সবমিলিয়ে কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি আমার হাত দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে স্থান পাবে না। সাত নেতার চিঠির বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
কমিটি থেকে বাদ দিতে চিঠি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা স্বেচ্ছাসেবক লীগ