Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ প্রকল্প: কাজে লাগছে বিশ্বব্যাংকের অতিরিক্ত অর্থ

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপনডেন্ট
২৮ অক্টোবর ২০২১ ১০:১৯

ফাইল ছবি

ঢাকা: বেঁচে যাওয়া বিশ্বব্যাংকের ঋণের অর্থ কাজে লাগাচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো)। এজন্য অনুমতি চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের। এটি মিললেই প্রস্তাব যাবে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। ‘ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চতুর্থ ইউনিট রিপাওয়ারিং’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে হতে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ১৪ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের মতামত জানতে চেয়েছে শিল্প ও শক্তি বিভাগ। সেখানে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব এ বিষয়ে একটি আধাসরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছে। সেটি পর্যালোচনা করে তিন কার্য দিবসের মধ্যে মতামত বা পরামর্শ দেওয়ার অনুরোধ করা হলো।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঘোড়াশাল ২১০ মেগাওয়াট চতুর্থ ইউনিট বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে রি-পাওয়ারিংয়ের মাধ্যমে অধিকতর দক্ষতাসম্পন্ন ৪০৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রূপান্তর করার জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাবিউবো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ‘ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ৮ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির প্রথম সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ব্যয় ধরা হয় মোট ২ হাজার ৭১ কোটি ৯৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২২০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, বিশ্বব্যাংকের ঋণ হতে  ১ হাজার ৬০৪ কোটি ৬৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা এবং বাবিউবোর ২৪৬ কোটি ৭২ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য ছিল। এছাড়া ২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনে সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। সর্বশেষ প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ১ হাজার ৪১০ কোটি ৫০ লাখ ১৯ হাজার টাকা ও ভৌত অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

সূত্র আরও জানায়, ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ার্ড কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্যাস টারবাইন ইউনিট ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। বর্তমানে স্টিম টারবাইনের সঙ্গে গ্যাস টারবাইন সিনক্রোনাইজ করার কাজ চলমান। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাংকের ঋণ চুক্তির শর্তানুযায়ী গ্যাস টারবাইনের যন্ত্রপাতি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে সেবা কাজের জন্য লং টার্ম সার্ভিস এগ্রিমেন্ট (এলটিএসএ) করা আবশ্যক। এই প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক সহায়তা (পিএ) খাতে চুক্তি করা অর্থ (২১৭ মিলিয়ন ডলার) হতে প্রায় ৩৯ মিলিয়ন ডলার অংশ অব্যয়িত রয়েছে, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৩০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে এ অব্যয়িত অর্থ হতে প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত গ্যাস টারবাইন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এলটিএসএ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পিপিআর-২০০৮ (সরকারি ক্রয় আইন) অনুসরণ করে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে গ্যাস টারবাইনের এলটিএসএ’র আওতায় ভোক্তাদের জন্য সেবা সরবরাহের জন্য একটি টেন্ডার এবং সার্ভিসেস কাজের জন্য অপর একটি টেন্ডার আহবান করা হয়। গ্যাস টারবাইনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জিই, ইউএসএ এর অথোরাইজড প্রতিনিধি দরপত্র দাখিল করে। দরপত্র মূল্যায়ন শেষে এলটিএসএ’র দুটি ক্রয় প্রস্তাব বাবিউবো বোর্ড সভার সুপারিশ করে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) অনুমোদনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঋণ চুক্তির অনুমোদিত মেয়াদ ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত। বেশ কয়েকবার আলোচনা ও পর্যালোচনা করে সর্বশেষ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে বিশ্বব্যাংক সম্মত আছে বলে জানিয়েছে। চুক্তির মেয়াদের মধ্যেই এলটিএসএ’র বিপরীতে বিশ্বব্যাংকের ঋণের টাকা ব্যবহার করতে হবে। তাই চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে এলটিএসএ চুক্তি করতে না পারলে বিশ্বব্যাংকের অব্যয়িত অর্থ ফেরত যাবে। এলটিএসএ কাজটি প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত নেই। তাই ক্রয় প্রস্তাব ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদের আগেই পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন বলেও সূত্রের পক্ষ থেকে জানান হয়।

এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড হতে বলা হয়েছে, সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি অনুযায়ী মোট ব্যয়ের অনুর্ধ ৫ শতাংশের মধ্যে নতুন কোনো অঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করলে পরিকল্পনা কমিশনের আগের অনুমোদন দিতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে এলটিএসএ’র ব্যয় মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৫ শতাংশের অধিক। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এলটিএসএ’র ক্রয় প্রস্তাব সিসিজিপি’র অনুমোদনের জন্য বিশেষ বিচেনায় পরিকল্পনা কমিশনের আগের অনুমোদন পাওয়া গেলে সময়ের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করে রাখা যায়।

প্রকল্প সম্পর্কে আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ বর্তমান সরকারের একটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত। সরকার নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এরমধ্যে ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। মুজিব বর্ষের মধ্যে শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় সম্প্রসারণের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করাও সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সেই লক্ষ পূরণের জন্যই প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের বিদ্যুৎ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংযুক্তি) মো.ফয়জুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, উদ্যোগটি ভাল। তবে এখনো অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

সারাবাংলা/জেজে/এনএস

ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন কেন্দ্র বিশ্বব্যাংক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর