Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাহাড়ে আ.লীগ নেতার দখলে সরকারি স্কুলের অর্ধেক জায়গা

জসিম মজুমদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৯ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৪৪

খাগড়াছড়ি: ১৯৯০ সালে এক একর (১০০ শতক) জায়গায় জেলার লক্ষীছড়ি উপজেলার জারুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ইউএনও মো. রোকন উদ দৌল্লার (বর্তমানে উপসচিব) সময়ে সার্ভেয়ার, হেডম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ের এক একর জায়গার পরিমাপ ও সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও দখল হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের অর্ধেক অংশ। লক্ষীছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জারুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, প্রায় ৫০ শতক (আধা একর) জায়গা সরকার দলীয় নেতা এবং তার অনুসারীরা দখল করে রেখেছেন। প্রভাব খাটিয়ে বাকি ৫০ শতক জায়গার মধ্যেই স্কুলের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের চেষ্টা করছেন সরকার দলীয় নেতা মোহাম্মদ আলম।

লক্ষীছড়ি উপজেলা প্রশাসন এবং মগাইছড়ি ও জারুলছড়ি এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান, মরিয়ম আক্তার, সুমন মিয়ার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, জারুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে কাজ শুরু করেছে লোকাল গভার্নমেন্ট ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট (এলজিইডি), লক্ষীছড়ি উপজেলা শাখা।

২০২০-২০২১ অর্থ বছরের ইজিপি টেন্ডারের (OTM) প্রক্রিয়ার মাধ্যম জারুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সরকারি প্রকিউরমেন্ট প্ল্যানের বাজেট ধরা হয় প্রায় ২৩ লাখ টাকা। ১৮ লাখ ১২ হাজার ৩৩ টাকায় এই কাজের ঠিকাদার নির্বাচিত হন মেসার্স সুবল বিন্দু চাকমা। তবে জারুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজের শুরুতেই বাধা দেয় স্কুল এলাকায় বসবাসকারী শতাধিক পরিবার।

এলাকাবাসীর অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ আলম, তার ভাই বাদশা, আবদুল জলিল, রওশান আরা বেগমসহ আরও কয়েকজন বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ শতক জায়গায় দোকান, ক্লাব, বাজার শেড এবং বসতঘর নির্মাণ করে দখল করে আছে। মোহাম্মদ আলম ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সভাপতি থাকার সময় বিদ্যালয়ের জমির দলিলপত্র সরিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

অন্যদিকে, বেদখল হওয়া ৫০ শতক বাদ দিয়ে বাকি ৫০ শতকের মধ্যে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করার জন্য ঠিকাদারকে চাপ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলম ও তার অনুসারীরা।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যালয়ের জায়গা উদ্ধার না করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ হলে যোগাযোগ দুর্ভোগে পড়বে এলাকাবাসী। কারণ এলাকাবাসী এখন স্কুলের দুই ভবনের মাঝ দিয়ে এসে মাঠ দিয়ে চলাচল করে। স্কুলের পাশে চলাচলের রাস্তার ওপর মোহাম্মদ আলমের করা স্থাপনা উচ্ছেদ করলে স্কুলের জায়গা যেমন উদ্ধার হবে, তেমনি যান চলাচলের রাস্তা ও উন্মুক্ত হবে।

ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের জায়গা উদ্ধার এবং রাস্তা উন্মুক্ত করার দাবিতে এলাকাবাসী উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত আবেদনও করেছেন।

লক্ষীছড়ি এলজিইডি অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান জানান, ২ বছর আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এসএমসি কমিটির সভাপতির মাধ্যমে প্রাপ্ত দরখাস্তের ভিত্তিতে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। প্রস্তাবনার আলোকে প্রকল্প পাস হয়েছে। এখন সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে এসে জায়গা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।

জারুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বৈশিষ্ঠ্য মোহন ত্রিপুরা জানান, বিদ্যালয়টি এক একর জায়গা উপরে প্রতিষ্ঠিত হলেও বিদ্যালয়ের অফিসে কোনো দলিল পত্র নেই।

নির্মাণ কাজের ঠিকাদারের পক্ষে মো. আবুল কালাম জানান, প্রাক্কলিত অর্থ দিয়ে ড্রয়িং ডিজাইন অনুযায়ী বিদ্যালয়ের চারপাশে প্রাচীর নির্মাণ করার কথা। তবে এলাকাবাসী বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধার করার পর কাজ করতে বলায় কাজ বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

লক্ষীছড়ি সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নাজিম হোসেন জানান বিদ্যালয়ের জায়গা পরিমাপ করে দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হয়েছে।

তবে জায়গা দখলে অভিযুক্ত লক্ষছড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলম বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার ভাই ও অনুসারীরা ক্রয়কৃত জমির উপরে স্থাপনা করেছেন। বিদ্যালয়টি এক সময় অন্য জায়গায় ছিলো, নিরাপত্তার জন্য এখানে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রকৃত জায়গা যেখানে যেমন ছিল, এখনও তেমনি আছে।’

তারা প্রায় ৪০ বছর ধরে এই জায়গার দখলে আছেন। স্কুলের জায়গা কমবেশির জন্য তিনি দায়ী নন। এলাকাবাসীর করা সব অভিযোগও অস্বীকার করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা।

লক্ষীছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইয়াছিন বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে বিদ্যালয়ের জায়গা পরিমাপ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিদ্যালয়ের ভবন ঘেঁষে অবস্থিত দোকান, ক্লাব, পরিত্যক্ত বাজার শেড ও বসত ঘর বিদ্যালয়ের জায়গায় পড়লে উচ্ছেদ করা হবে এবং নতুন করে একটি রাস্তা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ অনুমোদন করাতে হবে।’

সারাবাংলা/এমও

আ.লীগ নেতা খাগড়াছড়ি জারুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দখল সরকারি স্কুল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর