চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘরে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি
২৮ অক্টোবর ২০২১ ২১:৪৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে বড় পরিসরে একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক। চট্টগ্রামের পুরাতন সার্কিট হাউজে বিদ্যমান ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে’র বৈধ কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন করেন মন্ত্রী। এরপর বিকেলে তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।
মতবিনিময় সভার আগে ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর’ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কারা স্মৃতি জাদুঘর করেছে, কী প্রেক্ষাপটে করেছে— এসব নিয়ে মহান সংসদে আলোচনা হয়েছে। সংসদ সদস্যরা সবাই সোচ্চার ছিলেন। বিশেষ করে তিনবারের মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যিনি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন, তিনিও বলেছেন। তার কিছু প্রস্তাবনাও আছে। যেহেতু সার্কিট হাউজ রাষ্ট্রীয় সম্পদ, কোন কর্তৃপক্ষ এটা করেছে, তার বৈধ কোনো কাগজপত্র আমরা দেখিনি। আমরা চেষ্টা করেছি পাওয়ার জন্য। কীভাবে হয়েছে জানি না। যাই হোক সেটা (পুরাতন সার্কিট হাউজ) কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়, এই চট্টগ্রামবাসীর জন্য উন্মুক্ত করা যায়, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করেই ভবিষ্যতে একটা ব্যবস্থা নেব।’
বড় পরিসরে একটি জাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকার পরে মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার চট্টগ্রাম। এখানে একটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের মহাপরিকল্পনা চলছে। একমাস আগে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জায়গা দেখে গেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছেন। বিস্তরিত আলোচনাও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। এ জমিগুলো প্রতীকী মূল্যে আমাদের মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করা হলে আমরা সেটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখব এবং দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এখানে বড় পরিসরে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্যও নির্মাণ করা হবে।’
‘ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মুজিবনগর সংরক্ষণ করতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। কিন্তু যেখান থেকে মানুষ স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে পেয়েছিল, সেই চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের বিষয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। চট্টগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। কুচক্রীমহল যেন ইতিহাসকে বিকৃত করতে না পারে, সেজন্য এ স্থানগুলো সংরক্ষণ করা হবে,’— বলেন মন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শনের পর জেলা প্রশাসন আয়োজিত একই সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যা করা দরকার প্রধানমন্ত্রী তা-ই করে দিয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের অতন্দ্র প্রহরী। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু এখনো পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা ধর্মের নামে দেশে অরাজকতা তৈরি করছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে তারা দেশে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। উগ্র সাম্প্রদায়িকতাকে রুখতে সবাইকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা রাখতে হবে। জাতির প্রয়োজনে আবারও আমরা রাস্তায় নামব। স্বাধীনতাবিরোধীদের কঠোর হাতে দমন করব।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান সভায় জানান, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘরের জন্য বাছাই করা জায়গাটি উত্তর কাট্টলী মৌজার অন্তর্ভুক্ত। চারটি অবৈধ ইটভাটা ছিল সেখানে। জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ করার পর আবারও দখল করেছে তারা। এরপর আবার উচ্ছেদ করা হয়। ৩০ একর সরকারি খতিয়ানভুক্ত জায়গা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি শ্মশান আছে সেখানে। এর কোনো ক্ষতি হবে না। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পর এটি হবে দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্মৃতিসৌধ।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিদ ইজহার খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ফরিদা খানম সাকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ইদ্রিস সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার এ কে এম সরওয়ার কামাল দুলু এতে বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর