এক দশক পর শ্রীমঙ্গল পৌর নির্বাচন, লড়াইয়ে ২ ‘হেভিওয়েট প্রার্থী’
২৮ অক্টোবর ২০২১ ২২:৪৭
মৌলভীবাজার: নানা জটিলতা কাটিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর মেয়র নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন শ্রীমঙ্গল পৌরসভার অধিবাসীরা। আগামী ২৮ নভেম্বর শ্রীমঙ্গল পৌরসভা নির্বাচনে ভোট নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের খবরে এরই মধ্যে সরগরম হয়ে উঠেছে গোটা পৌরসভা। চায়ের দোকানগুলোতেও জমে উঠতে শুরু করেছে নির্বাচনি আড্ডা।
এদিকে, এখনো মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা শুরু করেছেন জনসংযোগ। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ বাড়িয়ে চলেছেন। বাড়ি বাড়ি উঠান বৈঠকও করছেন অনেকেই। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে মূলত ‘হেভিওয়েট’ দুই প্রার্থীর মধ্যে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক। আরেকজন বর্তমান পৌর মেয়র শিল্পপতি মো. মহসিন মিয়া মধু, যিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২ নভেম্বর। দাখিল করা মনোনয়নপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে ৪ নভেম্বর। বাছাইয়ে বৈধ প্রার্থীরা ১১ নভেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। এরপর ১২ নভেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে। ২৮ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি এখনো। অন্যদিকে দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমানে মেয়রের দায়িত্বে থাকা মহসিন মিয়া মধু। এ পরিস্থিতিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে মূলত তারই হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
মো. মহসিন মিয়া মধু ১৯৯৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন বার পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালেই এই পৌরসভাটি ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। এই সময়ে পৌরসভার আধুনিকায়ন, পৌর এলাকায় মার্কেট নির্মাণ, ফুটপাথ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, পৌরবাসীর সুপেয় পানির সরবরাহ ব্যবস্থাসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। তবে শহরে যানজট ও ফুটপাথ বেদখল নিয়ে অব্যবস্থাপনার অভিযোগও রয়েছে নাগরিকদের মধ্যে।
এদিকে, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হকেরও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি রয়েছে এলাকায়। জেলা আওয়ামী লীগের তিনি এক জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। পৌরসভা এলাকায় যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েই তিনি ভোটের লড়াইয়ে জিততে চান বলে জানিয়েছেন তারা সমর্থকরা।
জানা যায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পৌরসভা শ্রেণিবিন্যাসে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরে ১৯৯৪ সালের ১ জুলাই ‘খ’ শ্রেণি এবং ২০০২ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি পৌরসভাটি ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়।
মৌলভীবাজার জেলার রূপসপুর ও সুনগইড় মৌজার ৯টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত এই পৌরসভা। ২ দশমিক ৫৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ২০ হাজার ৯৪ জন।
সবশেষ ২০১১ সালে এই পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছিল। পরে সীমানা জটিলতা ও উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে এ পৌরসভায় আর নির্বাচন হয়নি। এক দশকের অপেক্ষা কাটিয়ে অবশেষে নতুন করে নগরপিতা নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন পৌরসভাবাসী।
সারাবাংলা/টিআর
অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক পৌর নির্বাচন মো. মহসিন মিয়া মধু শ্রীমঙ্গল পৌরসভা