Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষার্থীদের জীবনে আরও দীর্ঘ হবে মহামারির প্রভাব

তুহিন সাইফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ অক্টোবর ২০২১ ১৪:৪৬

ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে দীর্ঘ বন্ধের কারণে শিক্ষাখাতে অবকাঠামোগত যে ক্ষতি হয়েছে সেটি হয়তো পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে মহামারির যে প্রভাব সেটি দীর্ঘ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে তৈরি হবে নতুন অনেক সমস্যা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, পরীক্ষা নেওয়া হয় শিক্ষার অংশ হিসেবে কিন্তু শিক্ষার জন্য পরীক্ষা প্রয়োজনীয় নয়। আমাদের মানসে শিখার চেয়ে রেজাল্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। এই ধারণা থেকে সবাইকে বের হতে হবে। এটা ভুল ধারণা। তার চেয়ে শ্রেণি কার্যক্রমে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর পরীক্ষার কারণে যে সময় ব্যয় হচ্ছে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা ঘাটতি পূরণ করা যেত। তাহলে মহামারিতে শিক্ষাখাত যে ধাক্কা খেয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা সহজ হতো। না হলে এই ঘাটতির প্রভাব থেকে যাবে।

একই ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা হক বলেছেন, শিক্ষার্থীদের চাপ দেওয়া যাবে না। এরা মাত্রই একটা ধকল কাটিয়ে উঠেছেন। আপাত সমাধান সিলেবাস কমিয়ে তাদেরকে পরের ক্লাসে তুলে দিতে হবে। সেখানে ঘাটতিগুলো বের করতে হবে এবং সেগুলো যত্ন নিয়ে পূরণ করতে হবে।

এদিকে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, করোনায় শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়েছে কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর। মহামারির বিভিন্ন ভাগে ব্র্যাক, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। সবশেষ ইউনিসেফ ও ইউনেসকো যৌথভাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে তারা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, মহামারিতে বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। এজন্য করোনায় স্কুল বন্ধ থাকার বিষয়টিকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছে তারা।

বিজ্ঞাপন

ইউনিসেফ ও ইউনেসকোর ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শিক্ষা ব্যাহত হওয়া এসব শিশুর ভবিষ্যত ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা বলছে, এই সময়ে পড়াশোনার ক্ষতি, মানসিক সমস্যা, কাঠামোগত শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকি এবং শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব আগামী বছরগুলোতেও থাকবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মহামারির প্রভাব কাটিয়ে জাতিসংঘের ২০৩০ সালের এজেন্ডার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার শিক্ষাবিষয়ক লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শিক্ষা বাজেট গড়ে ১০ শতাংশ বাড়াতে হবে।

গত সপ্তাহে এই প্রতিবেদন যখন প্রকাশিত হয় তখন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, শিক্ষাখাতের ঘাটতি পূরণে সুপরিকল্পনা না থাকলে পরবর্তী সময়েও এর প্রভাব থাকবে। এ সময় তিনি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে অনুরোধ করেন।

ইউনিসেফ তাদের প্রতিবেদনে প্রযুক্তি বৈষম্যের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেন। তারা বলেন, প্রযুক্তি ঘাটতির কারণে দূরশিক্ষণ প্রকল্পটি প্রান্তিক শিশুদের খুব একটা কাজে আসেনি। এই প্রসঙ্গে শেলডন ইয়েট বলেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ও বৈষম্য কমিয়ে আনতে হলে সরকারকে আরও মনযোগী হতে হবে।

পুরো বিষয়টি সামাল দেওয়ার বিষয়টিকে এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, এই ঘাটতি স্বীকার করতে হবে। তা না হলে তার সমাধান আসবে না। এটি এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা মানসিক ও সামাজিক সমস্যার শিকার হচ্ছেন। এখন আবার তাদের ওপর টানা পরীক্ষার ভার তুলে দিলে হবে না। তাদের ঘাটতি বুঝতে হবে। শ্রেণি কার্যক্রমে আগের মতো অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।

এই সমস্যা সমাধানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারে গুরুত্ব দিতে বলছেন ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম। তিনি বলেন, যেসব দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো মজবুত সেখানে মহামারির সময়ে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া গেছে। পরের মহামারিকে চিন্তায় রেখে আমাদের প্রযুক্তির প্রসারে মনোযোগী হতে হবে।

তিনি বলেন, মহামারি যেটা হয়ে গেছে সেখানে মানুষের হাত ছিল না। ফলে সেটি নিয়ে মন খারাপ হওয়া যাবে না, পরিকল্পনা করতে হবে। ঘাটটি কমাতে হবে। ডিজিটাল অবকাঠামো মজবুত করতে হবে। সবার ঘরে ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দিয়ে ডিজিটাল শ্রেণি কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত করতে হবে এবং সাধারণ জনগণের আয় বাড়াতে হবে যেন তারা প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিপণ্যগুলো কিনতে পারে।

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ঘাটতি মোকাবিলায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে তা পূরণের পরিকল্পনা করছি, কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবায়নও করছি। শিক্ষাকে ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/টিএস/এএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর