‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা ধর্মের নামে মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছি’
২৯ অক্টোবর ২০২১ ২০:১৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেছেন, ‘বিভক্তি-বিভেদ, বিভাজন, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানির বাংলাদেশ আমরা চাই না। এই বাংলাদেশের ঐতিহ্য সম্প্রীতি, সংহতি আর ঐক্য রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই সম্প্রীতি রক্ষার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেক বেশি।’
শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর পতেঙ্গার চরপাড়া এলাকায় শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহার ও আরডিএনএ ধ্যানকেন্দ্রের কঠিন চীবর দান উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘কয়েকদিন আগে হিন্দু সম্প্রদায় যখন তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা করছিল, তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা আমরা দেখেছি। চট্টগ্রাম শহরে উত্তেজনা হয়েছে, বাঁশখালীতেও হয়েছে। এসব বিষয় গভীরভাবে উপলব্ধির সময় এসেছে। আমরা জানি, একসময় এই বাংলাদেশে সব মিষ্টির দোকান ছিল হিন্দুদের। মুসলমানরা তাদের মিলাদুন্নবিতে মিষ্টি কিনে নিয়ে যেত হিন্দুদের দোকান থেকে। আমরা সবাই যে অক্সিজেন গ্রহণ করি, তা স্রষ্টার দেওয়া একই গাছ থেকে। আমাদের সবার রক্ত একই, লাল। র্যাডিসন ব্লুতে যখন আমি খাবার খেতে যাই, বাবুর্চির ধর্ম কী আমি কি সেটা জিজ্ঞাসা করি?’
কিছু মানুষ ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে টানেল হবে, সেটা কেউ কোনোদিন ভেবেছিল? এই বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছি, ধর্ম নিয়ে মারাামারি করছি।’
‘কয়েকদিন আগেই এ দেশে একই দিনে মুসলমানরা ঈদে মিলাদুন্নবি করেছেন, বৌদ্ধরা প্রবারণা পূর্ণিমা করে ফানুস উড়িয়েছেন, হিন্দুরা লক্ষ্মীর আরাধনা করেছেন। এই প্রাকৃতিক মেলবন্ধন পরম করুণাময় আমাদের দিয়েছেন। এই সম্প্রীতির বন্ধন আমাদের রক্ষা করতে হবে। ধর্ম যার যার, এই দেশ এবং উৎসব সবার। আমি আমার ধর্ম পালন করব, অন্যরা অন্যদের ধর্ম পালন করবেন— কেউ বাধা দিতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন— এই দেশ মুসলমানের, মুসলমান তার ধর্ম পালন করবে। এই দেশ হিন্দুর, হিন্দুরা তার ধর্ম পালন করবে। এই দেশ বৌদ্ধের, বৌদ্ধরা তার ধর্ম পালন করবে। এই দেশ খ্রিষ্টানের, খ্রিষ্টানরা তার ধর্ম পালন করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না।’
বিপ্লব বড়ুয়া প্রশ্ন রাখেন— যেসব দেশ ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়েছে তারা কি শান্তিতে আছে? তিনি বলেন, ‘একটি দেশে শুধু একটি ধর্ম থাকবে— এমন তো হতে পারে না। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত হয়েছিল। অর্থাৎ হিন্দুরা থাকবে ভারতে আর মুসলমানরা পাকিস্তানে। আমরা ছিলাম পূর্ব-পাকিস্তানে। কিন্তু আমাদেরও তো অস্ত্র ধরতে হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। এই যুদ্ধ ছিল সাম্যের, সমতার যুদ্ধ।’
‘আমাদের সম্প্রীতি, ঐক্য, সংহতি রক্ষা করতে হবে। এটিই বাংলাদেশের ঐতিহ্য। আমরা একদিন থাকব না। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য যদি আমরা বিভক্তি-বিভেদ, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানির বাংলাদেশ রেখে যায়, তারা কি শান্তিতে থাকবে? এই বাংলাদেশ আমরা চাই না,’— বলেন বিপ্লব বড়ুয়া।
উপসংঘরাজ শাসনপ্রিয় মহাথেরোর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহার ও আরডিএন ধ্যানকেন্দ্রের অধ্যক্ষ এস লোকজিৎ মহাথের, প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, ডা. ভাগ্যধন বড়ুয়া, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের মহসচিব ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের, সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মো. জোবায়ের, পুলিশ কর্মকর্তা রনজিত বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের পানিসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক রাহুল বড়ুয়া, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুকুমার চৌধুরী, চসিকের কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ চৌধুরী, শাহানুর বেগম ও মো. ইলিয়াস।
ফাইল ছবি
সারাবাংলা/আরডি/টিআর