বিএনপি-জামায়াতের মুখে চপেটাঘাত মারতে হবে: এস এম কামাল
২৯ অক্টোবর ২০২১ ২২:৩৭
ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেছেন, নৌকার বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের মুখে চপেটাঘাত মারতে হবে। নৌকার বিজয়ের মাধ্যমেই সারাদেশে আমাদের এই বার্তা দিতে হবে যে— বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমরা রক্ষা করব।
শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে সিরাজগঞ্জ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জামিরতা ডিগ্রি কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী মেরিনা জাহান কবিতার এক নির্বাচনী জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান শফীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন নৌকা মার্কার প্রার্থী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, কেন্দ্রীয় সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওসার, পারভীন জামান কল্পনা, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কে এম হোসেন আলী (হাসান), ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ তালুকদারসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা। ৭ অক্টোবর গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোয়ন বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
এ আসনে নৌকার টিকিট পাওয়ার লড়াইয়ে তার আপন ছোট ভাই বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামও ছিলেন। তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক ভিসি মরহুম ড. মযহারুল ইসলামের সন্তান।
দলের মনোনয়নের জন্য দু-ভাইবোন ছাড়াও আরও অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
আগামী ২ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে বিকালে শাহজাদপুর উপজেলার জামিরতা ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক নির্বাচনী জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। নৌকার নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে বাদ্যবাজনাসহ উপস্থিত হতে শুরু করে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের ঢল নামে এবং কলেজ মাঠটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘নৌকা উন্নয়নের প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতীক, সমৃদ্ধির প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক, নৌকা বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, শেখ হাসিনার প্রতীক। নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ কোনোদিন প্রতারিত হয়নি। কোনোদিন বঞ্চিত হয়নি।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর জিয়া থেকে খালেদা জিয়া যারা ২৮ বছর ক্ষমতায় ছিল, যারা আপনাদের ধোঁকা দিয়ে জনগণের ভোটের সঙ্গে প্রতারণা করে সেদিন বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানিয়েছিল, বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বাংলাদেশ বানিয়েছি; সেই খালেদা জিয়া থেকে জিয়াউর রহমানরা ২৮ বছর ক্ষমতায় ছিল, তারা এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেনি।
‘কিন্তু আপনারা ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আপনাদের ভালোবাসা-দোয়া নিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারও আপনারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নয়ন সমৃদ্ধির বাংলাদেশে পরিণত করেছেন, বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল করেছেন’— বলে দাবি করেন রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা নৌকার সমর্থক, নৌকার নেতা; আমরা হয়ত মনে করি যে এমনিতেই জিতে যাব। কিন্তু প্রার্থী আছে, যিনি বিএনপি করেন। স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছেন। আপনি যদি মানুষের কাছে নৌকার ডাকটা পৌঁছে না দেন তাহলে আমি মনে করি এটা আপনার-আমার কারণে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে কারণ ওরা (বিএনপি-জামায়াত) মনে করে জনগণ ভোট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাই আমাদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে প্রমাণ করতে হবে শেখ হাসিনার প্রতি জনগণের আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচনে আমরা না জিতলেও শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্ব চলে যাবে না কিন্তু তারপরও আমরা এত কষ্ট করছি কেন? আমরা প্রমাণ করতে চাই, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। আর সেটা এই সিরাজগঞ্জবাসী আগামী ৩ তারিখ ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ করবেন।’
আপনারা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন, আমাদের প্রমাণ করতে হবে শেখ হাসিনাই হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর পরে শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী যিনি বাংলাদেশকে আধুনিক বাংলাদেশ করেছেন বলে মনে করেন তিনি।
আপনারা আগামী ২ তারিখ ভোটের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নৌকা উপহার দেবেন। শুধু উপহার নয় ভোটের সংখ্যা, ভোটকেন্দ্রে জনগণের উপস্থিতি বাড়াতেও নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান।
বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে দেশবাসীসহ নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে এসএম কামাল বলেন, ‘৩০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের আগে যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন তারা আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। আজকে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাচ্ছেন, দাঙ্গা বাধাতে চাচ্ছেন। তাই আপনারা ২ তারিখে নৌকার পক্ষে বিজয় এনে, ওদের মুখে আমাদের চপোটাঘাত মারতে হবে। তাই সারাদেশে বার্তা দিতে হবে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমরা রক্ষা করব।’
সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের উপ-নির্বাচন ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার নির্বাচন ভবনে তফসিল ঘোষণা করেন। সাবেক সংসদ সদস্য মো. হাসিবুর রহমান স্বপন ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করার পর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনটি শাহজাদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসন থেকে হাসিবুর রহমান দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।
তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে তিনি সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগ দিলে ১৯৯৮ সালে সংসদ সদস্য পদ হারান। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি শিল্প উপ-মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে