‘হতাশা নয়, জেগে উঠতে হবে’
৩০ অক্টোবর ২০২১ ১৯:০২
ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা অনেকেই হতাশ। প্রায়-ই হতাশার কথা শুনি। এই কিছুক্ষণ আগে আমাকে একজন জিজ্ঞাসা করলেন, স্যার আর কত দিন? এটাই এখন বড় রকমের জিজ্ঞাসা, পরিবর্তনটা কবে আসবে? চতুর্দিকে যে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা, এই অবস্থা থেকে আমরা কবে বের হতে পারব?
‘আমি খুব সরাসরি উত্তর দিতে চাই, আমরা অবশ্যই বের হতে পারব। কারণ এই দেশের মানুষ কখনোই পরাজয় বরণ করেনি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীনতার যুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন- সবকিছুর মধ্যে দেখবেন, মানুষ যখন জেগে উঠছে তখন কিন্তু তাদের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। সেজন্য মানুষকে জেগে উঠতে হবে’— বলেন মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) হোটেল সোনারগাঁওয়ের পদ্মা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর ওপর লেখা ‘আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী সংবর্ধনা গ্রন্থ’র প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন দেখি আমার একজন বোন, মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের শিকার হয় অথবা গ্রামের মধ্যে মা-বোনেরা ধর্ষণের শিকার হয়, তখন দেখি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা প্রতিবাদ মিছিল বেরিয়ে এসছে। টিপাইমুখে যখন বাঁধ তৈরি করতে যায়, সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদ করে কোনো মিছিল বের হয় না। আমার গণতন্ত্রকে যখন ধবংস করা হয়, ছাত্রদেরকে যখন পিটিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়, রক্ত ঝরানো হয়- তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রতিবাদ মিছিল বের হয় না। এটা দুঃখের কথা। আমাদের তরুণরা, আমাদের যুবকরা যদি জেগে না ওঠে তাহলে পরিবর্তনটা আসবে কোত্থেকে? আমি বিশ্বাস করি যে, পরিবর্তন আসবে অবশ্যই। হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জ্ঞানের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই এবং জ্ঞানের জগতে কোনো সীমারেখা নাই। আজকে এখানে যারা বক্তব্য রেখেছেন তাদের সঙ্গে আমি একমত যে, আমরা দুর্ভাগা জাতি। কারণ, আজ পর্যন্ত আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ করতে পারিনি। আমাদের সমাজ জ্ঞান বিমুখ সমাজ। আমরা যদি এই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ করতে পারতাম তাহলে আমাদের এত সমস্যা থাকতো না।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষাদানের পাশপাশি সমাজ বদলের একটা দায়িত্ব কিন্তু শিক্ষকদের থেকে যায়। সমাজ পরিবর্তনে শুধু রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব্ নয়, এই দায়িত্ব শিক্ষক সমাজ, পেশাজীবী, সকলেরই। যে সমাজ বা যে দেশে আমরা বাস করি এদেশের প্রতি আমাদের নিশ্চয়ই একটা মমত্ববোধ আছে। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক ও শোষণহীন বঞ্চনামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যে। ৫০ বছর পর তাকিয়ে দেখি আমাদের সেই স্বপ্ন বিফল হয়েছে। আজও আমাদের সেই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। আমাদের শোষণ, নির্যাতন, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়। আমি আশাবাদী, আমরা নিশ্চয়ই আবার গণতন্ত্র ফিরে পাব, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।’
বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মনসুর মুসা‘র সভাপতিত্বে ও কবি আবুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহছানুল হক মিলন, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর সহধর্মিনী লাকী নাসরিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক জাহেদুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুর রহমান সিদ্দিকী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক রেজাউল করীম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাবেক সাংসদ আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, সাবেক ছাত্র নেতা নজমুল হক নান্নু, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক খলিলুর রহমান, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক আবদুর রহমান, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, অধ্যাপক ইয়ারুল কবির, অধ্যাপক শের মুহাম্মদ, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসুদ প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম