সাড়ে ৩ বছরেও শেষ হয়নি ১.৮৫ কিমি রাস্তার কাজ!
৩০ অক্টোবর ২০২১ ২০:২৭
ঢাকা: বগুড়া শহর থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। সড়কটির দৈর্ঘ্য মাত্র ১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পেরিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে তিন বছর। অথচ এই সড়কের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪১ দশমিক ৩৭ শতাংশ! অর্থাৎ সাড়ে তিন বছরে মাত্র ৭৬৫ মিটার সড়কের কাজ হয়েছে!
এদিকে, ১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার সড়ক তৈরিতেই ব্যয় ধরা হয়েছিল একশ কোটি টাকার বেশি। এতদিন পরে এসে জানা যাচ্ছে, এই টাকাতেও সড়কটি নির্মাণের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। কাজটি শেষ করতে আরও প্রায় ৮০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সড়কটির পেছনে এখন ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১৮৫ কোটি টাকা। এই টাকায় কাজ শেষ করতে পারলে সড়কটির প্রতি মিটার নির্মাণের পেছনে ব্যয় দাঁড়াবে ১০ লাখ টাকা!
‘বগুড়া শহর থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটিতে দেখা গেছে এমন চিত্র। জানা যাচ্ছে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পাওয়ার সাড়ে তিন বছরের মাথায় প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বা ৬২ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৩৭ শতাংশে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে নতুন রেট শিডিউলে অনেক কিছুর খরচই বেড়ে গেছে। সে কারণে সড়কটি নির্মাণের খরচ বাড়ছে। অন্যদিকে সড়কটি নির্মাণে এত বেশি সময় লেগে যাওয়ার পেছনে তারা দায়ী করছেন ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতাকে।
পরিকল্পনা কমিশন এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বগুড়া শহর থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত ১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে ২০১৭ সালে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। ওই সময় সড়কটি নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছিল ১০৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। তবে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি। ফলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এর কাজ শেষ করা যায়নি। পরে প্রকল্প সংশোধন ছাড়াই তিন দফায় সড়কটি নির্মাণের সময় বাড়ানো হয়। প্রথমবার ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত, দ্বিতীয়বার ২০২১ সালের জুন এবং তৃতীয়বার ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়। তবে এর মধ্যে একবারও সড়ক নির্মাণের খরচ বাড়ানো হয়নি।
এদিকে, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় সড়কটি নির্মাণের খরচ বেড়ে যাচ্ছে বলে প্রাক্কলন করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে এবার প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করে পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। তাতে বাড়তি ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির জন্য সবমিলিয়ে খরচ ধরা হচ্ছে ১৮৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, সংশোধনী প্রস্তাটির প্রক্রিয়করণ এরই মধ্যে শেষে হয়েছে। এটি একনেকের আগামী বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। অর্থাৎ প্রকল্প অনুমোদনের পর সরকার অধিগ্রহণ নীতিমালা সংশোধন করে তিন গুণ দাম দেওয়ার নিয়ম চালু করে। এজন্য প্রকল্পটি সংশোধন না করা পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণে টাকা পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই বাস্তবায়নও করা যায়নি। এছাড়া এর ব্যয় ঠিকই আছে। আমি পর্যালোচনা করে দেখেছি। নতুন রাস্তাটি তৈরি করতে এরকমই ব্যয় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি ছোট হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে বগুড়া শহর থেকে মেডিকেল কলেজে যেতে রাস্তার দূরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার কমে আসবে। রোগী পরিবহন অনেক দ্রুত হবে।
প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পেছনে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরও ভূমি অধিগ্রহণকে অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরছে। সওজ বলছে, অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ২ দশমিক ৫৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮১ কোটি ৫১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা ছিল। পরে নতুন ভূমি অধিগ্রহণ নীতিমালা অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের খরচ বেড়ে যায়। তাতে এই খাতে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকায়। অর্থাৎ এই এক খাতেই ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
সওজ আরও বলছে, ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী দাফতরিক ব্যয় প্রাক্কলন করায় নতুন পেভমেন্ট নির্মাণের ব্যয় বাড়ছে ৭৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ ও গ্যাস এবং ভূগর্ভস্থ পানির লাইন স্থানান্তরে ইউটিলিটি সংস্থা থেকে পাওয়া হিসাবে ইউটিলিটি শিফটিং খাতেও ২৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা খরচ বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে একনেক প্রকল্প সংশোধনীতে অনুমোদন দিলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সড়কটি নির্মাণের কাজ শেষ করার বিষয়ে আশাবাদ জানিয়েছে সওজ।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর