Thursday 28 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধর্মের নামে অধর্মের হাঁক!

ওয়ারেছুন্নবী খন্দকার
৩০ অক্টোবর ২০২১ ২১:২০

কান্না দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখা প্রত্যেকটি মুসলমান নবজাতকের কানে প্রথম যে বাক্যগুচ্ছ পৌঁছায়, তা আজানের ধ্বনি। জীবনভর এই মধুর ধ্বনি মানুষকে সব ধরনের অন্যায় থেকে শুদ্ধাচার আর কল্যাণের পথে আসার আহ্বান জানায়। ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে খালি গলায় এই আহ্বান জানাতেন মুয়াজ্জিনরা। যে কারণে দূরে এই মধুর ধ্বনি পৌঁছানর সঙ্গে মুয়াজ্জিনের সওয়াব হাসিলের সুযোগ নিহিত করা হয়। কালের বিবর্তনে এলো শব্দ বর্ধিতকরণ যন্ত্র, মাইক। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মানুষের কানে দূর থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি যে অনুভূতির জন্ম দেয় তা ব্যাখ্যাতীত। সময়ের পরিক্রমায় বেড়েছে মসজিদ আর মাইকের সংখ্যা। তাই এখন দূর থেকে নয়, বরং খুব কাছ থেকে ভেসে আসে আজানের ধ্বনি। মসজিদে যাতায়াত বেড়েছে ধার্মিক এবং বক ধার্মিকের, মাইকের অপব্যবহারও বেড়েছে অনেক।

বিজ্ঞাপন

রাজাকার সাঈদীর বিচার ভণ্ডুল করতে মাইকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নামানো থেকে শুরু করে দুই গ্রামবাসীকে সংঘর্ষের আহ্বান জানানোসহ নানা অপকর্মের আহ্বান জানানো হচ্ছে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে।

সম্প্রতি রংপুরের পীরগঞ্জের বড় করিমপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘরে হামলার পূর্ব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয় মসজিদের মাইক ব্যবহার করে। পুলিশের ভাষ্যমতে, পরিতোষ আর সৈকতের ব্যক্তিগত রেষারেষির বলি হিন্দু পল্লীর ২১টি পরিবার। প্রথমে পরিতোষ তার ফেসবুক আইডিতে আপত্তিকর পোস্ট দেয়। সেই পোস্ট সৈকত তার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত এবং উত্তেজিত করে। পরে সৈকতের বন্ধু মুয়াজ্জিন রবিউল হামলার প্রস্তুতির জন্য মসজিদের মাইক ব্যবহার করে।

যে মাইকে মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী কল্যাণের আহ্বান শুনেছে, এখন সেই মাইকে ধ্বংসের আহ্বান! মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এর আগেও অসংখ্যবার অনৈতিক এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটান হয়েছে। সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। অথচ এ ধরণের প্রবণতা রোধে তেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি।

মসজিদের মাইকের আওয়াজের সঙ্গে মুসলমানদের পবিত্র সম্পর্ক, নাড়ীর সম্পর্ক। তবে পচন ধরেছে এই সম্পর্কেও। কতিপয় নির্বোধ আর দুর্বৃত্ত কেড়ে নিচ্ছে মসজিদের মাইক। নিচ্ছে সাধারণ মানুষের দুর্বলতার সুযোগ। আর এ কাজের জন্য দায়ী কতিপয় সুবিধাবাদী, যারা ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারে পটু।
শুধু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আহ্বানই নয়, অনেকে অজ্ঞতাপ্রসূত মসজিদের মাইকের আওয়াজকে বিরক্তিতে পরিণত করছেন ক্রমেই। দেশের বড় বড় শহরগুলোতে এক ভবন থেকে আরেক ভবনের দূরত্ব বলতে গেলে মানুষের নাক আর কানের দূরত্বের সমান। কয়েকটি ভবন পর পর মসজিদ। তবু মুয়াজ্জিনদের মধ্যে প্রারম্ভিক যুগের মতো দূরে আজানের ধ্বনি পৌঁছানোর খায়েশ অবিচল।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মসজিদের ভেতর মাইকে বয়ান দেন ঈমাম সাহেবরা। যাতে মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের পাশাপাশি ধর্মীয় বক্তব্য শুনে বাকিরা সওয়াবের ভাগিদার হতে পারেন কিংবা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারেন। এটা ইতিবাচক দিক হলেও ঈমাম সাহেবদের এটাও ভাবতে হবে, ভবনের দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা লেগে প্রতিধ্বনিত শব্দগুলো মূলত শব্দ দূষণে পরিণত হয়।

এছাড়া বিভিন্ন মাহফিলেও উপস্থিত মুসল্লিদের কান ছেদ করে আশপাশের এলাকায় যাতে শব্দ চলে যায় এমন ব্যবস্থাও রাখা হয় অনেক সময়। এ ক্ষেত্রে অনিচ্ছা সত্বেও অনেককে রাতভর বয়ান শুনতে হয়। কিন্তু কানে পৌঁছানো শব্দ আর বয়ানের মধ্যে পার্থক্য করে দেয় পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিবন্ধকতা । ফলে অনেকে ভুল শুনতে পান কিংবা ভুল বুঝতে পেরে অনুমান নির্ভর সিদ্ধান্তে চলে যান, যা ধর্মের জন্য ক্ষতি ডেকে আনে। এসব নানা কারণেই হয়ত পরহেজগারদের একটি গ্রুপ সব সময় মাইক ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। সম্প্রতি সৌদি আরব সরকারও মসজিদের মাইক ব্যবহারে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে।

তাই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট এবং বাস্তবতার নিরিখে মসজিদের মাইক ব্যবহারে সাবধানতার পাশাপাশি অপব্যবহার রোধে সচেতনতা খুবই জরুরি। প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। না হলে ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের একটি ঘোষণাই বড় সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে।

লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, গাজী টেলিভিশন

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই

ওয়ারেছুন্নবী খন্দকার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর