Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা-ইয়াবা-আইস— ‘সুরক্ষা’ পাচ্ছে অরক্ষিত কক্সবাজারে!

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ অক্টোবর ২০২১ ২৩:১২

কক্সবাজার থেকে ফিরে: কক্সবাজার গিয়েছিলাম একটি পুরো বাস রিজার্ভ করে। স্ত্রী ও বাচ্চার প্রথম কক্সবাজার ভ্রমণ হওয়ায় নানান জিনিসপত্র কেনা হয়েছে। মার্কেট ঘুরে ঘুরে একেকটা জিনিসপত্র কিনছিলাম আর ভাবছিলাম সবকিছু খুলে দেখাতে হবে চেকপোস্টে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তারপরও কয়েক প্রকার আচার, কাঠ বাদাম, শুঁটকি আর এটা সেটা মিলে কয়েকটি পুটলি হয়ে গেলো। আমার মতো আরও ১১ পরিবারেরও একই অবস্থা। তারাও জিনিসপত্র কিনে অনেক ব্যাগ বানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

২১ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টার দিকে হোটেল লং বিচের সামনে থেকে গাড়ি ছাড়ল ঢাকার উদ্দেশে। বাসেও সবাই আলোচনা করছিলাম, শুনেছি কক্সবাজার থেকে ঢাকার দিকে বাস ছাড়ার পর বেশ কয়েকটি চেকপোস্টে তল্লাশির মুখে পড়তে হয়। আজ যদি তল্লাশির মুখে পড়তে হয়, তাহলে অনেক ঝামেলা হবে। একেক রকম শুঁটকির একেকটি পুটলি। কত রকম আচারের প্যাকেট। লাগেজ খুলে তল্লাশি করলে সবকিছু হ য ব র ল হয়ে যাবে। তবে সবাই এও বলছিল যে, আইন মানতে বাধ্য আমরা। আমাদের তো ভয় নেই। আমাদের কাছে কোনো অবৈধ মালপত্রও নেই। সবকিছু একটু খুলে দেখানো। এটুকু ভোগান্তি মেনে নিতেই হবে।

বিজ্ঞাপন

কিন্ত কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম আসলাম; কোথাও কোনো চেকপোস্ট পেলাম না। আমাদের সবার প্রশ্ন, কোথাও কোনো চেকপোস্ট নেই কেন? নাকি সাংবাদিকদের গাড়ি দেখে থামায়নি। জবাবে একজন বললেন, গাড়ির সামনে তো সাংবাদিক লেখা ছিল না। চালককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, না স্যার, করোনার কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর থেকে কেউ আর তল্লাশি করছে না। কোনো গাড়ি-ই চেক করছে না। বলা চলে এই মুহূর্তে কক্সবাজার অরক্ষিত!

গাড়ির চালক আরও বলেন, এর আগে কক্সবাজার থেকে গাড়ি বের হলেই বিজিবি, পুলিশ, ডিবি, এমনকি সেনাবাহিনীরও চেকপোস্টে পড়তো হতো। আর র‌্যবের চেকপোস্ট তো থাকতই। মাঝে মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরেরও চেকপোস্ট বসতো। একাধিক চেকপোস্টে পড়তে হবে এজন্য অতিরিক্ত সময় হাতে নিয়ে গাড়ি ছাড়া হতো। এখন চেকপোস্ট নেই, তাই একটু ধীরে গাড়ি ছাড়া হয়। এতে কোনো সমস্যা হয় না। এরপরেও গাড়ি সকাল হওয়ার আগেই ঢাকা পৌঁছে যায়।

চট্টগ্রামের শুরুতে একটি খাবার হোটেলে রাতের খাবারের বিরতিতে বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকটি বাসের হেলপার ও সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা হয়। শ্যামলী পরিবহনের চালক নবী উল্লাহ বলেন, ‘আপাতত কোথাও চেকপোস্ট নেই। আগে ছিল। ভবিষ্যতে চেকপোস্ট বসানো হবে কি না এখনো জানি না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কক্সবাজার শহর থেকে শুরু করে কলাতলী পর্যন্ত মূলত ট্যুরিস্ট এলাকা। করোনার কারণে দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল এখানকার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, এমনকি খাবার দোকানও। কিছু দিন হলো সব খুলে দিয়েছে সরকার। জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মিটিংয়ে সবাই বলেছিল পর্যটকদের কক্সবাজারে বেশি বেশি আনতে সব রকমের নিয়ম কানুন যেন শিথিল থাকে। কড়াকড়ি যেন আরোপ করা না হয়। অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়। আমরা এও বলেছি, চেকপোস্টের সংখ্যা কমিয়ে কিছুদিন গোপনে নজরদারি বাড়ানো দরকার। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপাতত কলাতলী এলাকায় চেকপোস্ট নেই।’

মেয়র আরও বলেন, ‘চেকপোস্ট না থাকায় কেউ সুযোগ নিয়ে যদি মাদক পাচারের সুযোগ খোঁজে তাহলে অচিরেই নতুন করে চেকপোস্ট বসানো দরকার বলে মনে করছি। অন্যদিকে, এ সুযোগে কোনো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেন কক্সবাজার দিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।’

আগে রোহিঙ্গা ও মাদক ঠেকাতে একাধিক চেকপোস্ট থাকলেও এবার কঠোর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর কোনো চেকপোস্ট নেই কেন? জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার আজাদ মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘চেকপোস্ট আছে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার সদরে আসার সড়কে। একথা সত্য যে, কলাতলী বা তার আশেপাশের এলাকায় এই মুহূর্তে কোনো চেকপোস্ট নেই। তবে সবসময় নজরদারি করছে পুলিশ। এছাড়া রোহিঙ্গা বা মাদক সংক্রান্ত কোনো তথ্য পেলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালাচ্ছে। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। তবে ভাবছি যে, কক্সবাজার শহর থেকে বের হওয়ার সময় আগে যে চেকপোস্ট ছিল তা আবার নতুন করে বসানো যায় কি না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে চেকপোস্ট ছিল; তবে সেটি প্রতিদিন বসানো হতো না। অনিয়মিতভাবে বসানো হতো। স্থায়ী চেকপোস্ট রয়েছে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার শহরে ঢোকার মুখে। সেখানে শুধু পুলিশই নয়, বরং অন্যান্য বাহিনীরও চেকপোস্ট রয়েছে।’

তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের বলছেন, এদিকে তল্লাশি থাকা দরকার। কারণ এই পথ দিয়ে রোহিঙ্গারা সারাদেশে মিশে যেতে পারে। আবার এই পথ দিয়েই সারাদেশে মাদক বিশেষ করে ইয়াবা ও আইস ছড়িয়ে পড়ছে। তবে অনেকে হয়রানিরও শিকার হয়েছে। যাই হোক না কেন, যেহেতু রোহিঙ্গা ও ইয়াবা সমস্যা এখানে প্রকট তাই চেকপোস্ট থাকাটাই জরুরি।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

অরক্ষিত কক্সবাজার রোহিঙ্গা-ইয়াবা-আইস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর