ধীরগতির মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যয় বাড়ছে ৫৫২ কোটি টাকা
৩১ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৩৩
ঢাকা: ধীরগতি বিরাজ করছে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিতে। গত জুন মাসে মেয়াদ শেষ হলেও মে মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৭৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩৬.৬২ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৪৫ শতাংশ। এ প্রেক্ষাপটে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল মিরসরাই প্রথম পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এ পর্যায়ে বাড়ছে ব্যয় ও মেয়াদ।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সেখান থেকে ব্যয় ৫৫২ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার বেড়ে এখন দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৩০২ কোটি ৯১ লাখ ১১ হাজার টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো পালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নে কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।
প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য সব ধরনের সুবিধাসহ ৫৩৯টি শিল্প প্লট তৈরি করা। দু’টি স্ট্যান্ডার্ড ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি নাগরিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। প্রায় ২৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করা এবং ৩ হাজার ২৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করা। বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য প্রায় ২৫.২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক তৈরি ও ৪৫ একরের জলাধার এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য একটি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও চারটি কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পাইপ লাইন স্থাপন করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) আধুনিক সুবিধা সম্বলিত শিল্প প্লট স্থাপনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রেখে আসছে। বেপজা পরিচালিত আটটি ইপিজেডে বর্তমানে কোনো শিল্প প্লট খালি নেই। বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্য বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীর ১৪ নম্বর ব্লকে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরসরাই প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বেপজাকে ১ হাজার ১৫০ একর জমি দিয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, শিল্প প্লটের সংখ্যা ২৫০টি থেকে বাড়িয়ে ৫৩৯টি নির্ধারণ করায় ভূমি উন্নয়ন ও অন্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কিছু নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ আরও ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন প্রস্তাবনায় ৩৪টি অঙ্গে মোট ৪৬৭ কোটি ৭০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২৭টি অঙ্গে মোট ৯৭ কোটি ৯৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে মোট ৩৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রকল্পে একটি ‘বি টাইপ’ ফায়ার স্টেশনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, দু’টি কারখানা ভবন, ফুটপাত, গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, তিনটি আবাসিক ভবন, একটি মসজিদ ও একটি মেডিকেল সেন্টার নির্মাণসহ কয়েকটি নতুন অঙ্গ সংযোজন করা হয়েছে। ফলে নতুন অঙ্গগুলোর জন্য ১৮২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যং বেড়েছে।
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রস্তাবিত এলাকায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, দ্রুত শিল্পায়ন, পণ্য বহুমুখীকরণ, রফতানি আয় বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’ এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীসহ ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে বলেও আশা করেন তিনি।
সারাবাংলা/জেজে/এমও