‘সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা নতুন নয়’
৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৬:২৮
ঢাকা: সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল নতুন নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ: আজকের প্রেক্ষাপট ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা আয়োজন করে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।
আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, “দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সেটির একটিই উদ্দেশ্য- সেটা হলো রাজনৈতিক। আর সেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটা হলো, বর্তমানে যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা এবং সামনে যে ‘নির্বাচন নির্বাচন খেলা‘ আসছে, সেই খেলায় আবার জয়লাভ করা।”
‘আমরা ঘটার পর থেকেই বলে আসছি- এখানে সরকার সম্পূর্ণভাবে দায়ী, এখানে কোনো কনফিউশন নাই। এই ঘটনা ঘটিয়েছে সরকার। উদ্দেশ্য হচ্ছে- জনগণের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তার অধিকার আদায়ের জন্য, তার নিরাপত্তার জন্য, সেই আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়া’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমরা রংপুরে দেখেছি, সেখানে ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতারা। রোকেয়া ইউনিভার্সিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈকত মন্ডল, আরেক জনের নাম রেজাউল। এই দুইজন নেতৃত্ব দিয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতে, নির্বাহী কর্মকর্তা যখন মিছিলকারীদের সঙ্গে মিটিং করছিলেন, তখন তারা গঙ্গাচরাতে আগুন দিয়েছে। সুতরাং এখানে সন্দেহ, সংশয় ও বিশ্লেষণের কোনো অবকাশ নাই। সরকারের লোকজনে করেছে, সরকারের এজেন্টরা করেছে এবং এটা থেকে তারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কাকতালীয় ব্যাপার আছে। ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লায়, পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরায় নির্বাচন হচ্ছে। সেই ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটছে। এই সাম্প্রদায়িক বিষয়টিকে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা, এটা নতুন কোনো ব্যাপার নয়। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একজন পাগলকে দিয়ে কোরআন শরিফ পূজামণ্ডপে রাখা হলো, তারপর হাইপ তোলা হলো- ধর্ম গেল, ধর্ম গেল, মুসলমানরা জাগো। পুলিশে আবার গুলি করে হাজিগঞ্জে লোক মেরে ফেলল।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো নেতা জড়িত। এবং এর কোনো বিচার হয়নি। হবে না এই জন্য যে, এই অস্ত্রটা তাদের দরকার। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করছে, ভোটের জন্য যারা লড়াই করছে, তাদেরকে তারা রুখে দিতে চায়। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ২০১২ সালে যেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দিয়েছে, সেদিন থেকেই বাংলাদেশে অস্থিরতা, সহিংসতা পাকাপোক্ত হয়ে বসে গেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যতগুলো সংকট তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে, তার সবগুলোর মূলে গণতন্ত্রহীনতা। গণতন্ত্র আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে না পারলে সংকটগুলো থেকেই যাবে। আজকে সবাই আমরা পরিবর্তন চাই। পরিবর্তন ঘটাতে হলে সবার আগে এগিয়ে আসার প্রয়োজন তরুণদের, যুবকদের। রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্যই তাদের ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু সেখানে ভ্যানগার্ডের দায়িত্ব পালন করতে হবে তরুণ ও যুবকদের।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যতন্ত আশাবাদী। কারণ, এদেশের মানুষ কখনো ব্যর্থ হয়নি। বারবার লড়াই হয়েছে, সংগ্রাম হয়েছে। কিছু দিনের জন্য আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি, কিন্তু পরাজিত হইনি। আমি বিশ্বাস করি, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, আমরা অবশ্যই গণতান্ত্রিক সমাজ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ফিরিয়ে আনতে পারব এবং জয়ী হতে পারব।’
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, “একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা পড়ে গেছি। গোটা দেশ ভণ্ডামির মধ্যে পড়ে গেছে। আজকে যদি সত্যজিৎ রায় বেঁচে থাকতেন, তাহলে আরেকটা নতুন সিনেমা আমরা পেতাম, সেটা হলো ‘হীরক রানীর দেশে’।”
‘এই হীরক রানীর দেশে উনি কত রকমের ভণ্ডামি যে করতে পারেন। উনি অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে ভণ্ডামি করেন, উনি ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে ভণ্ডামি করেন। আর ভোটের ভণ্ডামি, গণতন্ত্রের ভণ্ডামি তো আছেই। এটা তো এখন বিশ্ব বেহায়াকেও ছাড়িয়ে গেছে’— বলেন সুব্রত চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘উনার চোখের ইশারা ছাড়া বাংলাদেশের কোনো পাতা নড়ে না। বিশ্বাস করার কোনো কারণ নাই যে, একযুগ ধরে রামু থেকে নাসিরনগর, নাসিরনগর থেকে কুমিল্লা- এগুলো কি সরকারের ইন্ধন ছাড়া হচ্ছে? উনারা আবার সম্প্রীতির মিছিল করছে, যারা আক্রমণ করল, থানা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, আওয়ামী লীগের এমপি, আওয়ামী লীগের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের মেয়র, আওয়ামী লীগের নেতারা মিলে।’
সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম? আজকে দেশটাকে যেখানে নিয়ে গেছে। আমাদেরকে কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।’
নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম