যুবকের লাশ উদ্ধারের ২ দিনের মধ্যে খুনের রহস্য উদঘাটন
৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৩০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে শ্বাসরোধ করে খুন করা এক যুবকের লাশ উদ্ধারের দু’দিনের মধ্যে খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে জড়িত মূল ব্যক্তিসহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রোববার (৩১ অক্টোবর) সংস্থাটি জানিয়েছে, এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের জড়ানোর জেরে ওই নারীর সাবেক স্বামী তাকে লোক ভাড়া করে নৃশংসভাবে খুন করে।
গ্রেফতার দু’জন হলেন- নুরুল আমিন (২৭) ও মো. শাহজাহান (৩৬)। নুরুল আমিনের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায়। শাহজাহানের বাড়ি কুমিল্লায়।
গত ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী থানার উত্তর কাট্টলী টোল রোড এলাকায় কৃষিজমি থেকে সজীব (২২) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে নাম-পরিচয় পাওয়া না গেলেও পরে স্বজনরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। তার ভাই ইকবাল হোসেন বাদি হয়ে ২৮ অক্টোবর পাহাড়তলী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পিবিআই জানিয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলার তদন্তভার নেওয়া হয়।
পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের পরপরই আমরা কাজ শুরু করি। নিহত সজীবের মোবাইলে কললিস্টের সূত্রে ২৮ অক্টোবর হবিগঞ্জ থেকে নুরুল আমিন এবং পরদিন চট্টগ্রাম শহরের আকবর শাহ থেকে শাহজাহানকে গ্রেফতার করি। তাদের কাছে খুনের বিস্তারিত বিবরণ ও কারণ পাওয়া যায়। ৩০ অক্টোবর (শনিবার) নুরুল আমিন আদালতে জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।’
ঘটনার বিবরণ দিয়ে পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ জানান, নুরুল আমিন পেশায় টাইলস শ্রমিক। স্ত্রী নিয়ে তিনি চট্টগ্রাম শহরে থাকতেন। কোভিড মহামারিতে গত লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়ায় তারা গ্রামের বাড়িতে চলে যান। সাত বছর আগে বিয়ে করলেও নুরুল আমিন ও জান্নাতুল ফেরদৌস দম্পতির কোনো সন্তান ছিল না। নুরুল আমিনের মা ছেলেকে আবারও বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে থাকেন। বিষয়টি জানার পর জান্নাতুল ক্ষুব্ধ হন। তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।
তিনি আরও জানান, মাসখানেক আগে জান্নাতুল রাগ করে বাপের বাড়ির উদ্দেশে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড এলাকায় এসে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত জান্নাতুলের সঙ্গে পিকআপ চালক সজীবের পরিচয় হয়। দু’জনের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে মোবাইলে যোগাযোগ ছিল। একমাস আগে জান্নাতুল স্বেচ্ছায় নুরুল আমিনের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান। সজীবকে বিয়ে করার উদ্দেশ্য ছিল তার। নুরুল আমিন জানতে পেরে উত্তেজিত হয়ে সজীবকে খুন করার পরিকল্পনা করেন। সে জান্নাতুলকে বারবার আগের দাম্পত্য জীবনে ফিরে যাবার জন্য চাপ দিচ্ছিল।
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরও জানান, সজীবকে খুনের উদ্দেশে নুরুল আমিন ৫ হাজার টাকায় তার পূর্বপরিচিত শাহজাহান ও আরেকজনকে ভাড়া করেন। গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম শহরে এসে সজীবকে পিকআপ ভাড়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে উত্তর কাট্টলী টোল রোডে যান। সেখানে তিনজন মিলে সজীবকে জমিতে ফেলে স্যান্ডো গেঞ্জি দিয়ে গলায় শ্বাসরোধ করে খুন করেন। লাশ সেখানে ফেলে তিনজন চলে আসেন। নুরুল আমিন রাতে একটি হোটেলে ছিলেন। পর দিন তিনি হবিগঞ্জে চলে যান। শাহজাহানের সঙ্গে থাকা খুনে জড়িত আরেকজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম