বিদ্যালয়ের কমিটির নির্বাচনে ইউপি সদস্যের প্রভাব বিস্তার

ইউপি সদস্য আলম হাওলাদার, ছবি: সারাবাংলা

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী): জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আলম হাওলাদারের বিরুদ্ধে। গত শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে মনোনয়ন পত্র বিতরণের সময় প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। এ সময় বহিরাগত লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ের কাজে তিনি বাধা প্রদান করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির ফরম বিক্রির কথা থাকলে উৎসবমুখর পরিবেশে অভিভাবকরা ফরম নিতে আসেন। এ সময় ইউপি সদস্য আলম হাওলাদার অভিভাবকদের ফরম কিনতে বাধা প্রদানসহ অকথ্য ভাষায় সংবাদকর্মীদের গালিগালাজ করেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি প্রধান শিক্ষকের টেবিলে থাপ্পড় দিয়ে অনেক উচ্চবাচ্য কথা বলেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুছ এবং মহিলা ইউপি সদস্য অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।

অভিযোগকারী অভিভাবক এবং মহিপুর প্রেসক্লাব সদস্য মনির হাওলাদার জানান, আমার বাবা এই বিদ্যালয়ের জমিদাতা। আমি অভিভাবক হিসেবে ফরম নিতে গিয়েছি। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমি বিগত ইউপি নির্বাচনে তার পক্ষ কাজ না করার অজুহাত দেখিয়ে মেম্বর আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। এমনকি নিজে অন্যায় করে আবার আমাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন। আমরা কিভাবে রাস্তায় বের হই তা নাকি দেখিয়ে দেবেন তিনি।

স্থানীয় সমাজসেবক এবং বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও অভিভাবক আবদুর রহমান মুছুল্লী জানান, আমিসহ আমার ৪টি সন্তান এই স্কুলে লেখাপড়ার সুবাদে অভিভাবকদের সঙ্গে এখানে এসেছি। কিন্তু ইউপি মেম্বর বিষয়টি মানতে পারেনি। তিনি অভিভাবকদের হুমকি প্রদান করেন। এছাড়াও অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের কাছে টাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে- তিনি বলেন কোন কথা হবে না, আজকে দিতে হবে এটাই আইন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য আলম হাওলাদার জানান, ওই প্রতিষ্ঠান আমার বাবা করেছেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি সেখানে গিয়েছি। কিন্তু মনির হাওলাদার এবং তার ভাই কামাল হাওলাদার আমার বংশের লোক এবং বিএনপি নেতা। বিগত দিনে কামাল আমাকে অনেক ভুগিয়েছে। এখনো আমাকে অত্যাচার করে। তাই আমি নিরুপায় হয়ে তাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছি।

লতাচাপলী ইউপির ৭,৮ এবং ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মিনা রহমান জানান, নির্ধারিত সময়ে ফরম বিক্রির কথা থাকলেও অনেক অভিভাবক এখানে উপস্থিত হন। এ সময় অভিভাবক মনির হাওলাদার প্রধান শিক্ষককে দুই হাজার টাকা অগ্রীম নেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চান। তখন আলম মেম্বর টেবিলে থাপ্পড় দিয়ে বলেন, এটা সিদ্ধান্ত হয়েছে আজকেই দিতে হবে। তখন মহিপুর প্রেসক্লাব সদস্য অভিভাবক মনির হাওলাদার বলেন, নিয়ম মত না হলে নিউজ হতে পারে। এ কথা বলায় আলম মেম্বর তার ওপর ক্ষিপ্ত হন। তিনি সাংবাদিকদের নিয়ে খুব বাজে মন্তব্য করেন, যা মুখে প্রকাশ করতে পারছি না। তিনি সাংবাদিক মনির হাওলাদার এবং তার ভাইকে অনেক হুমকি প্রদান করেন।

আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুছ জানান, অভিভাবকরা আমার কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে ইউপি মেম্বর উচ্চবাচ্য করেছেন। তখন স্থানীয় অভিভাবক এবং তার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমি এবং মহিলা ইউপি সদস্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সকল প্রক্রিয়া নিয়ম মেনে করা হবে বলেও জানান তিনি।

৭নং লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, বিষয়টি মেম্বর আমাকে জানিয়েছেন। এটা তাদের পারিবারিক সমস্যা। আমার ইউপির কোনো বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন বিষয়ে আমি কোনোদিন হস্তক্ষেপ করিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাসার জানান, টাকা জমা দেওয়ার ব্যাপারে যে সমস্যা হয়েছিল তা প্রধান শিক্ষককে সমাধানের জন্য বলে দিয়েছি।

সারাবাংলা/এনএস

আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কলাপাড়া বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন