শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকায় সর্বপ্রথম ভ্যাকসিন নিল তাহসান
১ নভেম্বর ২০২১ ১৪:২৭
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে আজ (সোমবার, ১ নভেম্বর)। এ দিন রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এ দিন স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বপ্রথম ভ্যাকসিন গ্রহণ করে মতিঝিল আইডিয়ালের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহসান হোসেন। এরপরই ভ্যাকসিন গ্রহণ করে একই শ্রেণির মাহজাবিন তমা।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তাহসান হোসেন বলে, ‘সবার আগে ভ্যাকসিন নিয়েছি এটা ভাবতেই একটু ভালো লাগছে। তবে শুরুর দিকে কিছুটা ভয় কাজ করছিল। কিন্তু ভ্যাকসিন গ্রহণের সময় সবাই উৎসাহ দিচ্ছিল। এখন আর ভয় লাগছে না। ভ্যাকসিন নেওয়া শেষে এখন পর্যন্ত কোনো অসুস্থতাও বোধ করিনি।’
তাহসান বলে, ‘আমার বাবা মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাত শাখার প্রধান শিক্ষক। আমার মাও রাজধানীর আরেকটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকরা সবসময়েই শিক্ষার্থীদের সামনে থেকে আলোর পথ দেখান। আর তাই আমি পিছিয়ে থাকতে চাই নি। যখনই সুযোগ এসেছে তখনই ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছি।’
নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানিয়ে তাহসান বলে, ‘খুব একটা বেশি জটিলতা হয়নি। তবে কিছু সহপাঠীর সমস্যা হয়েছে শুনলেও এখন সবারই নিবন্ধন সম্পন্ন। আশা করছি সবাই খুব দ্রুতই ভ্যাকসিন নিয়ে নেবে।’
এদিন ভ্যাকসিন নেয় মতিঝিল আইডিয়ালের নবম শ্রেণির দ্বিতীয় শাখার জারিয়া ইবতিদা। সে সারাবাংলাকে বলে, ‘আমার বাসায় বাবা, মা আগেই ভ্যাকসিন নিয়েছিল। তখন থেকেই আসলে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম ভ্যাকসিন নিতে। এখন সেই সুযোগ এলো। আশা করছি, খুব দ্রুতই সবাই ভ্যাকসিন নিয়ে নেবে।’
একই স্কুলের নবম শ্রেণির দশম শাখার ইফফাত ইয়ামিন লিখন সারাবাংলাকে বলে, ‘ভ্যাকসিন নিবন্ধন প্রক্রিয়া খুব সহজ ছিল। তেমন একটা সমস্যা হয়নি। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ সময় আমরা স্কুলে আসতে পারিনি। আশা করছি, এখন ভ্যাকসিন গ্রহণ করে ধীরে ধীরে আগের মতন স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে আসতে পারব।’
আইডিয়াল স্কুলের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ক বিভাগের শিক্ষক শফিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। অনলাইনে ক্লাস করালেও আসলে তাতে শ্রেণিকক্ষের আনন্দ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কেউই নিতে পারে না। এখন যখন ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে আশা করছি খুব দ্রুতই সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবার ক্লাস শুরু করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘সবাই আজকে স্বতস্ফুর্তভাবে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে এসেছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কিছু সমস্যার অভিযোগ শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত যারা নিবন্ধন করেছে তারা আশা করি খুব দ্রুতই ভ্যাকসিন গ্রহণ করবে। যারা এখনো নিবন্ধন করতে পারেনি তাদের তথ্য আবারও আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) পাঠাব।’
এ দিন ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে আটটি স্কুলে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছি। প্রতিদিন বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পাঁচ হাজার করে ৪০ হাজার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, আগামীকাল থেকে রাজধানীর আটটি কেন্দ্রে প্রতিদিন ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কক্ষ রয়েছে সেগুলোকেই কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে অধিদফতর। কারণ ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ করতে হয় হিমাঙ্কের নিচে মাইনাস ৯০-৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। এক্ষেত্রে আল্ট্রা কোল্ড ফ্রিজারের প্রয়োজন হয়। আর পরিবহনের জন্য দরকার থার্মাল শিপিং কন্টেইনার বা আল্ট্রা ফ্রিজার ভ্যান।
তিনি বলেন, ‘১২ বছরের নিচে এখনই ভ্যাকসিন নয়। ড্রপ আউট হোক আর যেই হোক সবার ভ্যাকসিন প্রয়োজন, ব্যবস্থা করা হবে।’
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগে রাজধানীর আটটি কেন্দ্র ও সারাদেশে আপাতত ২১ জেলা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে, আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থাও আছে।’
কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে যে কাজ করছে তা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডা. দীপু মনি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুব হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলমসহ অন্যরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে ৭০ লাখ ডোজ ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন রয়েছে। আগামী নভেম্বরে আরও ৩৫ লাখ ডোজ ফাইজারের ভ্যাকসিন দেশে আসার সম্ভাবনা আছে।
এর আগে, গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার চারটি স্কুলের ১২ থেকে ১৭ বয়সী ১২০ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
শিশুদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের এই কার্যক্রম উদ্বোধন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের প্রয়োগের উপযোগী ৬০ লাখ ভ্যাকসিন আমাদের হাতে আছে। এর মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন আমরা দেব।’
এর আগে, গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার চারটি স্কুলের ১২ থেকে ১৭ বয়সী ১২০ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
সারাবাংলা/এসবি/একে