সিআরবিতে হাসপাতাল: রেলমন্ত্রীকে ‘নমনীয়’ মনে হয়েছে আন্দোলনকারীদের
১ নভেম্বর ২০২১ ১৭:৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: টানা তিন মাস ধরে আন্দোলনের পর চট্টগ্রামের সিআরবিতে হাসপাতাল না করার দাবি নিয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আন্দোলনকারী সংগঠন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা জানিয়েছেন, রেলমন্ত্রী সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে আগের অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে কিছুটা নমনীয় হয়েছেন বলে আন্দোলনকারীদের মনে হয়েছে। তবে বরাবরের মতো রেলমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
এদিকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
সোমবার (১ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকায় রেলভবনে নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রামের প্রতিনিধি দল রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ সময় রেলমন্ত্রীর কাছে সিআরবির হাসপাতাল প্রকল্পের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘২০০৯ সালের গেজেট অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি অনুমোদিত সরকার ঘোষিত হেরিটেজ জোন সিআরবি। এখানে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে পারে না, আইনত নিষিদ্ধ। সিআরবিতে চাকসু জিএস শহিদ আবদুর রবসহ নয় শহিদের কবর আছে। এখানে কোনো স্থাপনা হলে তাদের কবর ধ্বংস হবে।’
নাগরিক সমাজ হাসপাতালের বিপক্ষে নয়, তবে সিআরবির বাইরে অন্যত্র হাসপাতাল চায়— রেলমন্ত্রীকে এমন অবস্থানের কথা জানান ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল। এ সময় রেলমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে হাসপাতাল করতে হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে নকশা অনুমোদন করতে হবে। সিডিএ যদি নকশা না দেয়, সেখানে হাসপাতাল হবে কীভাবে। সবচেয়ে বড় কথা- চট্টগ্রামবাসী না চাইলে সেখানে হাসপাতাল প্রকল্প হবে না। সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প রেল মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেনি। এটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পিপিপি অথরিটির প্রকল্প। বিনিয়োগও বেসরকারি। সুতরাং রেল মন্ত্রণালয়ের এখানে করার কিছু নেই।’
নাগরিক সমাজের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত ও বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর আশ্বাস দিয়ে রেলমন্ত্রী তাদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমার অভিমত হচ্ছে, আইন ও চট্টগ্রামবাসীর সেন্টিমেন্টের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। আমরা যা কিছু করছি জনগণের কল্যাণে। জনগণের কল্যাণে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাগরিক সমাজের যুগ্ম সদস্য সচিব ও বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী সারাবাংলাকে বলেন, ‘রেলমন্ত্রীর বক্তব্যে আমাদের মনে হয়েছে, সিআরবিতে হাসপাতাল করার ইস্যুতে তিনি এখন অনেকটাই নমনীয়। উনার বক্তব্যে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। তবে আমরা অপেক্ষা করছি হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ঘোষণার জন্য। সেই ঘোষণা আসার আগপর্যন্ত আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন চলবে।’
মতবিনিময়ের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রামের কো-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস, আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, জাসদ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাজান চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান ও প্রণব চৌধুরী।
উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় সিআরবিতে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট বাস্তবায়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য। প্রকল্পের মেয়াদ ১২ বছর।
দুই বছর আগে প্রকল্পটি অনুমোদনের বিষয়টি প্রকাশ পেলে চট্টগ্রামে বিভিন্ন নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলনে নেমেছিল। গত জুলাইয়ে গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি উঠে এলে আবারও সোচ্চার হন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এবং ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালে রাস্তায় নামে মানুষ। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে সিআরবি এলাকায় নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন হচ্ছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর সরকারি সফরে চট্টগ্রামে এসেছিলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে রেলমন্ত্রী সিআরবিতে হাসপাতালের বিরুদ্ধে আন্দোলন নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। সেসময় তিনি বলেছিলেন ‘চট্টগ্রামের মানুষ যদি কোনো স্থাপনা না চান, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হবে না।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম