মোমের আলোয় অনন্তলোকের প্রার্থনা
২ নভেম্বর ২০২১ ২০:০৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ৯ মাস আগে বাবা উইলসন গোমেজকে হারিয়েছেন জেমস গোমেজ। মাথার ওপর ছায়া হয়ে থাকা বাবা পাড়ি দিয়েছেন অনন্তলোকে। ভেজা চোখ, হাতে প্রজ্বলিত মোমবাতি— বাবার পূণ্যস্মৃতি হৃদয়ে রেখে তার শান্তি কামনায় ছেলে জেমস গোমেজ দাঁড়িয়েছিলেন সমাধির শিয়রে।
জেমস গোমেজের মতো খিষ্ট ধর্মাবলম্বী হাজারও নারী-পুরুষ, শিশু সমবেত হয়েছিলেন নগরীর বিভিন্ন গির্জায়। পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে অনন্তলোকে পাড়ি দেওয়া স্বজনদের জন্য প্রার্থনা করছিলেন তারা।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছে ‘অল সোলস ডে’। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন গির্জাতেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বলন করেছেন অনন্তলোকের সওয়ারি হওয়া মানুষগুলোর পুণ্যপ্রার্থী স্বজনেরা। প্রয়াতদের সমাধিতে ফুল ছিটিয়েছেন। প্রার্থনায়ও শরিক হয়েছেন।
এবারও চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় সমাগম হয়েছে নগরীর পাথরঘাটায় রাণী জপমালা গির্জার কবরস্থানে। শেষ বিকেলের আকাশে যখন বিদায়ী সূর্যের লালচে আভা উঁকি দিচ্ছিল, তখন থেকেই রাণী জপমালা গির্জার কবরস্থানে জড়ো হতে থাকেন শোকার্ত স্বজনেরা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আর্চডায়োসিসের পালকীয় সমন্বয়কারী মানিক উইলভার ডি কস্তা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের বৃহত্তম এই গির্জায় শোক ও প্রার্থনা সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এতে পৌরহিত্য করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার। সহযোগিতা করেন ফাদার টেরেন্স রড্রিক্স ও ফাদার সজল আন্তনী গোমেজ।
সমবেতদের উদ্দেশে আর্চবিশপ সুব্রত হাওলাদার বলেন, ‘প্রতিবছর ২ নভেম্বর আমরা কবরস্থানে আসি, কবর সাজাই, মোম জ্বালাই। তবে সবকিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৃত আত্মীয়স্বজনের আত্মার জন্য প্রার্থনা করা, তাদের নামে জগতে মঙ্গল কাজ করা। আমাদের দেখে আমাদের সন্তানেরাও শিখবে, তারাও আমাদের আত্মার কল্যাণার্থে প্রার্থনা ও মঙ্গল কাজ করতে শিখবে।’
‘অল সোলস ডে’ বিষয়ে মানিক উইলভার ডি কস্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাথলিক খ্রিষ্ট বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করেন, মৃত্যুর পরে আমাদের আত্মা জাগতিক দুর্বলতার জন্য পরিশোধিত হয়। এই সাময়িক শোধনের স্থান হচ্ছে শুচ্যাগ্নিস্থান। আমরা আমাদের মৃত আত্মীয়দের জন্য প্রার্থনা করি, যেন ঈশ্বর দ্রুত তাদের আত্মাকে স্বর্গধামে গ্রহণ করেন।’
ফাদার টেরেন্স রড্রিক্স বলেন, ‘খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য আজ একটি বিশেষ দিন। এদিন আমরা তাদের আত্মার শান্তি কামনায় মহাপ্রার্থনা করেছি। তাদের আত্মা যেন স্বর্গসুখ লাভ করে, সেই প্রার্থনা করেছি। তারা যেন অনন্তলোকে প্রভু যিশুর সান্নিধ্য পান, সেই প্রার্থনা করেছি। এছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষার আকুতিও জানানো হয়েছে মহান ঈশ্বরের কাছে।’
প্রার্থনায় উপস্থিত কারিতাস, বাংলাদেশের পরিচালক (কর্মসূচি) জেমস গোমেজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারিতে বাবাকে আমি হারিয়েছি। বাবাকে ছাড়া এবার প্রথম অল সোলস ডে পালন করেছি। বাবার জন্য অনন্তলোকের পাশাপাশি নিজেদের পূণ্যময় জীবন কামনায় প্রার্থনা করেছি। পাশাপাশি মৃত সব স্বজনের জন্যও প্রার্থনা করেছি।’
প্রার্থনা শেষে খ্রিষ্ট ভক্তদের জন্য খ্রিষ্টপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। ‘অল সোলস ডে’ উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন গির্জায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
ছবি: শ্যামল নন্দী
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
অনন্তলোকের প্রার্থনা অল সোলস ডে উইলভার ডি কস্তা রাণী জপমালা গির্জা