ইতিহাসে জাতীয় ৪ নেতা থাকবেন চির উজ্জ্বল: দীপু মনি
৩ নভেম্বর ২০২১ ২০:৫৯
ঢাকা: বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতীয় চার নেতা চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন। তাদের রক্তের ঋণ শোধ করা যাবে না। পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ড ন্যাক্কারজনক হয়েই থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বুধবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গীভূত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ড: বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনার এবং ইনস্টিটিউটে এমফিল লিডিং-টু-পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া নতুন গবেষকদের গবেষণা পরিচিতি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মূল্য উদ্দেশ্য ছিল আমাদের দীর্ঘদিনের মূল্যবোধকে দূরে ঠেলে দেশকে আবার পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেওয়া। এ কারণেই ঘাতকেরা প্রথমে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। এরপর জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করেছে। ঘাতকেরা ভেবেছিল, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার এবং তার আদর্শের কেউ বেঁচে থাকলে তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতকেরা এই চার নেতাকে টার্গেট করেছিল। কারণ তারা কোনো প্রলোভন ও ভয়ের কাছে নতি স্বীকার করেননি।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি চার নেতার অবিচল আস্থা ও ভালোবাসা ছিল উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধকে অত্যন্ত সঠিকভাবে পরিচালনা করেছিলেন। এ কারণেই তাদের হত্যা করা হয়। কারণ তারা বেঁচে থাকলে ঘাতকদের হীন স্বার্থ উদ্ধার হতো না।
বর্তমান প্রজন্মকেও নেতার প্রতি অবিচল আস্থা আর ভালোবাসা রাখার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতীয় চার নেতা যেমন করে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে জীবন দিয়েছেন, বিশ্বাস ও আস্থায় রেখেছেন, তেমন করে বর্তমান সময়েও বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে নিজেদের তৈরি করতে হবে। যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। আমরা শুধু আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে এই দিবসগুলো পালন করব না, সত্যিকার অর্থে এর মর্মার্থ আমরা বুকে ধারণ করব এবং নিজেদের তৈরি করব।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আজকে সাম্প্রদায়িক হামলায় কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বন্ধে আমাদের অসাম্প্রদায়িক মানুষ তৈরি করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে উপযুক্ত সুনাগরিক হিসেবে তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা মুখ্য। তারাই নতুন প্রজন্মকে মানবিক ও সুনাগরিক হিসেবে তৈরি করতে পারেন। সেটি করতে পারলে এর চেয়ে ভালো শ্রদ্ধা নিবেদন আর হতে পারে না।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, জাতীয় চার নেতা হত্যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, এর পেছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। আজ এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে গবেষণার প্রস্তাব আসছে। সব উপলব্ধি কি গবেষণায় বের হয়? গবেষণায় কি কখনো ওই ব্যথা তুলে আনা সম্ভব, যেখানে সন্তান জানে নিরাপরাধ দেশপ্রেমিক মানুষকে জেলখানায় হত্যা করা হয়? ক্ষমতার প্রলোভন, চেতনা বিনাশের অবিনাশী খেলা— সেটি কি সবসময় গবেষণায় উঠে আসে? সব উপলব্ধি কি গবেষণায় উঠে আনা যায়? আমার মনে হয়, কখনো কখনো একমাত্র ইতিহাস চেতনা এবং চর্চা আমাদের শুদ্ধ করতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে কোনোভাবেই যেন আওয়ামী লীগ মাথা উঁচু করে না দাঁড়াতে পারে। কিন্তু ওই ঘাতকেরা পরাজিত হয়েছে। খুনিরা যে সূক্ষ্ম পরিকল্পনা করেছে, তাদের যে চিন্তার শক্তি ছিল, সেটাও ঠিক। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বাইরে থেকে ছিলেন বলেই বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু বোকারা জানে না— শেখ মুজিব কোনো রাষ্ট্রের নয়, তিনি পৃথিবীর একমাত্র নেতা যিনি রাষ্ট্রপ্রধান না হয়েও পূর্ব বাংলার সাত কোটি মানুষ তার কথাই শুনত। তিনি যা বলতেন তাই করতেন। একটি জাতিকে মুক্ত করার জন্য তিনি ছিলেন বাংলার আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র।
সেমিনারে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর, আর জেল হত্যাকাণ্ডের ৪৬ বছর। আমাদের শুধু বিচার করলেই হবে না। এখন সময় এসেছে কমিশন গঠন করে হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের বিচার করা। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইনস্টিটিউট চার নেতা হত্যাকাণ্ড নিয়ে গবেষণা করতে পারে।
অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে গবেষণার বিষয়বস্তু ও গবেষকদের পরিচিতি নিয়ে ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করেন স্নাতকপূর্ব শিক্ষা বিষয়ক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দিন। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা ব্রজলাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শরীফ আতিকুজ্জামান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা মিরা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুস সালাম হাওলাদার, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, বিভিন্ন দফতরের বিভাগীয় প্রধানসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ফাইল ছবি
সারাবাংলা/টিএস/টিআর