Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সোয়ারীঘাটের জুতার কারখানা ছিল রাসায়নিকে ঠাসা

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৫ নভেম্বর ২০২১ ১৯:১৮

ঢাকা: রাজধানীর সোয়ারীঘাটের কামালবাগে রোমানা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি জুতার কারখানায় আগুন পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এলাকাবাসীর দাবি— জুতার ওই কারখানাটিতে রাসায়নিকের ড্রামে ঠাসা ছিল। আর নানারকম রাসায়নিক থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সময় লেগেছে। ততক্ষণে ঘুমিয়ে থাকা পাঁচশ্রমিক পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন। আরও দুইজনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তিরা হলেন চাঁদপুরের মনির হোসেন (৩১), বরিশালের আব্দুর রহমান রুবেল (৩৫), মানিকগঞ্জের আমিনুল (৩০), শেরপুরের কামরুল ইসলাম (২২) ও কিশোরগঞ্জ বাজিতপুরের মো. শামিম মিয়া (৩৫)।

বিজ্ঞাপন

নিহতরা সবাই ওই কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানিয়েছে চকবাজার থানা পুলিশ।

শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সোয়ারীঘাটের ওই ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়— রোমানা রাবার নামে ওই কারখানায় মূলত বার্মিজ জুতা ও স্পন্সের সেন্ডেল তৈরি করা হতো। জুতা তৈরিতে ব্যবহৃত রাবার, প্লাস্টিক ও রাসায়নিকে ভর্তি অনেক ড্রাম ছিল। জুতা তৈরির পাশাপাশি ওই কারখানায় নানারকম দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। যে কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের বেগ পেতে হয়। রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও টিনশেড ওই কারখানার ভেতরে প্রবেশ করা এবং উদ্ধার কাজ শুরু করতে সকাল ৬টা হয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়— কামালবাগে আবাসিক এলাকা থেকে মাত্র ১০০-১৫০ গজ দূরে জুতার ওই কারখানাটি অবস্থিত। পুড়ে যাওয়া দুতলা বিশিষ্ট ভবনটিতে প্রবেশের সময় নিচতলায় রাসায়নিকে ভর্তি একাধিক ড্রাম পাওয়া গেছে। এ ছাড়া উভয় তলায় জুতা বানানোর কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও রাবার পড়ে ছিল। আগুনে এ সব প্লাস্টিক ও রাবারসহ গোটা গোডাউন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এমনকি আগুনে কারখানাটির পাশে থাকা মদিনা বাজার নামে একটি কাঁচাবাজারও আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। বাজারে থাকা সব ধরনের মালামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও পুড়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

দেখা গেছে— ভবনটি মূলত দুতলা হলেও একতলার ওপর পাটাতন দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে শ্রমিকদের থাকার জন্য খোপ তৈরি করা হয়েছিল। সেখান থেকেই নিহত পাঁচ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। পুড়ে যাওয়া জুতার কারখানার আশপাশে একাধিক রাসায়নিকের দোকানও দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে আগুন লাগার বর্ণনা দিয়ে আমজাদ হোসেন নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমে একটি বিকট শব্দ শুনতে পাই। পরে আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি, কারখানাটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুনের তাপ অনেক বেশি হওয়ায় দাঁড়ানো যাচ্ছিল না। স্বাভাবিক আগুনের তুলনায় অনেক বেশি তীব্রতা ছিল।’

জয়নাল আবেদীন নামে আরেকজন বলেন, ‘আমি নিজেও একটি জুতার কারখানায় কাজ করি। বার্মিজ জুতা বানাতে ডিওপি তেল ব্যবহার করা হয়। এখানেও ওই তেল জাতীয় রাসায়নিক ছিল। এছাড়া জুতা বানাতে ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিক ও রাবার। এসব জিনিস থাকায় আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল।’

কারখানাটির পাশেই অবস্থিত মদিনা মার্কেটের সুভারভাইজার মো. রফিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘১০-১২ বছর আগে রফিক হাজী জমি লিজ নিয়ে কারখানাটি তৈরি করেন। রফিক হাজীর বাসা চকবাজারের রহমতগঞ্জের হাজী রোডে। রাত ১টার দিকে মার্কেটের নাইট গার্ড ফোন দিয়ে আগুন লাগার কথা তাকে জানান। সকালে এসে দেখি কারখানাটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।’

কারখানাটিতে রাসায়নিক ছিল কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বার্মিজ জুতা বানাতে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। তবে এসব কেমিক্যালে আগুন লাগে কি-না তা আমি জানি না।’

এদিকে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন।

সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের প্রধান পরিদর্শক মো. সাইফুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। কেমিক্যাল সাদৃশ্য কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো সিআইডির রাসায়নিক ল্যাবে পরীক্ষা করলে বলা যাবে আসলে এগুলো দাহ্য পদার্থ ছিল কি-না।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু মরদেহগুলো আগুনে মারাত্মকভাবে পুড়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ডিএনএ পরীক্ষার ছাড়া মরদেহগুলো শনাক্ত করা যাবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে পরিদর্শক বলেন, ‘আগুন লাগার আগে কোনো কিছু বিস্ফোরিত হয়েছিল কিনা তাও আগে বলা সম্ভব নয়। আমরা অনেক কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। তবে ধারণা করা হচ্ছে বিস্ফোরণেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল কাইউম বলেন, ‘আগুনের ঘটনায় পাঁচ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আরও দুজন দগ্ধ হয়েছে। নিহতদের নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের (মিডফোর্ট) মর্গে পাঠানো হয়েছে।’

ঘটনাস্থলে ডিফেন্স অধিদফতরের সহকারী উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে তা জানতে কাজ করা হচ্ছে। ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে প্রচুর পরিমাণে রাবার জাতীয় কাঁচামাল পাওয়া গেছে। রাবার এক ধরনের পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ। এ ছাড়াও ডিওপি তেল মজুদ ছিল, যা দাহ্য পদার্থ।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

কেমিক্যাল রাসায়নিকের গুদাম সোয়ারীঘাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর