শনিবার থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকে ভ্যাকসিন, টার্গেট ৭০ লাখ
৫ নভেম্বর ২০২১ ২২:৫৭
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচিতে গতি বাড়াতে নেওয়া হয়েছে নতুন পরিকল্পনা। এবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত যাচ্ছে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি। দেশের প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে ৭০ লাখ মানুষকে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে দিনে ৫০০ ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।
শনিবার (৬ নভেম্বর) থেকে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) পর্যন্ত সপ্তাহের যেকোনো একদিন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, সারা দেশে সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি নেই সেখানে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। সপ্তাহের যেকোনো একদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুবিধাজনক সময়ে এই কর্মসূচি পরিচালনা করবেন। কমিউনিটি ক্লিনিকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম পৌঁছাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইপিআই বিভাগ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধানে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় সবাইকে নিবন্ধন করে ভ্যাকসিন নিতে হবে। প্রতিটি ক্লিনিকে নির্ধারিত একটি বুথে ভ্যাকসিন প্রয়োগের এক মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য ডা. এ এস আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরিকল্পনা আছে সরকারের। আর তাই এই কর্মসূচিতে গতি বাড়াতে এবার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। এই ক্লিনিকগুলো পরিচালনা করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। তাদের ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিন প্রয়োগে প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে সহায়তা করার জন্য থাকবেন স্বাস্থ্য অধিদফতর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের দুই জন মাঠকর্মী।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ৫০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে। ৬ থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ আগামীকাল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যেকোনো এক দিন এই কর্মসূচি একেকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিচালনা করা হবে। ১৮ বছরের বেশি বয়সী যারা ইতোমধ্যেই নিবন্ধন করেছেন তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাবে ও এলাকার মানুষকে ভ্যাকসিন গ্রহনের জন্য জানাবে।’
জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. মীর মোবারক হোসেন দিগন্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘কুমিল্লা জেলার সব উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল (শনিবার, ৬ নভেম্বর) থেকে যে কোনো একদিন পর্যায়ক্রমে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে কর্মসূচি।’
তিনি বলেন, ‘মূলত ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম গতিশীল করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে নিবন্ধন করেও গ্রামাঞ্চলের যারা এখনো ভ্যাকসিন নিতে পারেন নি তাদের ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা যাবে।’
উপজেলায় প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহজাহান আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে যারা নিবন্ধন করেছে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। প্রতিটা ক্লিনিকের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভ্যাকসিন পাঠাবে জেলা ইপিআই সেন্টার। সেগুলো পাঠানোর পরে আমাদের তদারকিতে থাকবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য এসএমএস পাঠানো হবে। প্রথম ডোজ নেওয়ার এক মাস পরেই দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।’ নিবন্ধন ছাড়া কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না বলেও জানান এই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য ডা. শামসুল হক বলেন, ‘আগামী ৬ থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী একটি বিশেষ কোভিড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হচ্ছে। দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর প্রতিটিতে ৫ থেকে ১২ নভেম্বরের মধ্যে গড়ে ৫০০ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একদিন করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে নির্ধারিত এলাকায় প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমকে পৌঁছে দিতেই কমিউনিটি ক্লিনিকে এবারের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই আমরা ভ্যাকসিনসহ যাবতীয় সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়েছি।’
ডা. শামসুল বলেন, ‘আগের মতো নারী ও বয়স্করা এবারের ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনেও অগ্রাধিকার পাবেন। এছাড়া আগে নিবন্ধন করেও যারা এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন পাননি তাদেরও ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত টিকাদান অব্যাহত থাকবে। ঢাকা শহরের নির্ধারিত স্কুলগুলোতেও শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দায়িত্ব পালন করা সিএইচসিপিদের কাছে এলাকার মানুষের তথ্য আছে। তারা ভ্যাকসিন গ্রহণে প্রয়োজনীয় নিবন্ধনের জন্য এলাকার মানুষকে সাহায্য করবেন।’
উল্লেখ্য, দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৬ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় এসেছেন।
এর আগে, ৭ আগস্ট দেশে প্রথমবারের মতন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয় যা গণটিকা নামে পরিচিত। এই ক্যাম্পেইনে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয় ৭ সেপ্টেম্বর। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে দ্বিতীয় ক্যাম্পেইনে ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এই ক্যাম্পেইনের দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয় ২৮ অক্টোবর ও ২৯ অক্টোবর।
সারাবাংলা/এসবি/এমও