পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ইঙ্গিত নেই
৫ নভেম্বর ২০২১ ২৩:০৪
ঢাকা: ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে হঠাৎ করেই সারাদেশে চলা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের কোনো ইঙ্গিত নেই বলে জানা গেছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলছেন, আগামী সাত দিনের আগে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। কেউ বলছেন, আগামী রোববার (৭ নভেম্বর) পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বিআরটিএ’র বৈঠক আছে, তার আগে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেই।
শুক্রবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিভাগ বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ধর্মঘট প্রত্যাহারের কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। কতদিন চলবে তাও বলতে পারছি না। আগামী রোববার বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত মিটিং আছে। সেখানে কী সিদ্ধান্ত হয় তার ওপর নির্ভর করছে ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে, কি হবে না।’
আপনি গতকাল বলেছিলেন, আমরা পরিবহন ধর্মঘট দিচ্ছি না। কিন্তু আজ সকাল থেকে কোথাও কোনো বাস চলছে না। এমন প্রশ্নের জবাবে এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোনো ধর্মঘট ডাকিনি। কিন্তু অনেক বাস মালিক বাস বন্ধ রেখেছে। আমরা তো তাদের বাইরে যেতে পারি না। কারণ তাদের দাবি তো যৌক্তিক। সেই যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমরা একাত্বতা পোষণ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় বাস মালিকরা তাদের বাস চালানো বন্ধ রেখেছে। তাদের দাবি, অযৌক্তিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন হয় জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করা হোক নতুবা গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হোক।’
এদিকে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রথম দিন পণ্য পরিবহন বন্ধ রেখেছি। তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করা বা ভাড়া বাড়ানো না হলে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবো না।’
এক প্রশ্নের জবাবে রুস্তম আলী বলেন, ‘আগামী রোববার (৭ নভেম্বর) সরকারের সঙ্গে বৈঠক আছে তাতে যদি কোনো সুরাহা মেলে তাহলে হয়তো কোনো ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
অন্যদিকে সারাদেশে গণপরিবহন ও পণ্যপরিবহন বন্ধ থাকায় জন জীবনে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রথম দিন হওয়ায় বাজারে ততটা প্রভাব না পড়লেও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। শুক্রবার অনেকেই ছুটিতে বাড়িতে যেতে বের হয়ে বিপাকে পড়েছেন। আবার ছুটির দিন শুক্রবারে বেশ কয়েকটি চাকরির পরীক্ষা থাকায় চাকরিপ্রার্খীরা বেশ ভোগান্তিতে পড়েন। দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে চাকরিপ্রার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে যান।
সাজ্জাদ হোসেন রংপুর থেকে ঢাকায় বৃহস্পতিবার রাতে রওয়ানা হয়ে শুক্রবার ভোরে পৌঁছান। ভোরে কোনো বাস না পেয়ে কাউন্টারেই অপেক্ষা করেন। এরপর তিনি জানতে পারেন বাস ধর্মঘটের কথা। এরপর তিনি ২৫০ টাকার সিএনজি ভাড়া ৫০০ টাকা দিয়ে কল্যাণপুর থেকে সুত্রাপুর ফজলুল হক কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছান।
আরেক পরীক্ষার্থী তানজিনা শিলা তিনি এসেছেন রাজশাহী থেকে। তিনি বলেন, ‘সময় স্বল্পতার কারণে পাঠাওয়ে এসেছেন তিনি। নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে ১০০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে ওই পাঠাও চালককে।’
শুক্রবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু যাত্রী কেউ কুমিল্লা, কেউ নোয়াখালী কেউ ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবেন। বাস না থাকায় তারা বিকল্প কোনো যানবাহনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
যাত্রী শাহীনুর রহমান বলেন, ‘কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই বাস ধর্মঘট চলছে। যদি ঘোষণা দিত তাহলে আমরা কষ্ট করে বাসা থেকে বের হতাম না। এটি এক ধরনের খেলা ছাড়া কিছুই না।’
গুলিস্তানে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জগামী বাস কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই রুটে এরইমধ্যে আগের ভাড়ার চেয়ে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এরপরও বাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ।
কাউন্টারের একজন সহকারী বলেন, ‘নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। তেলের দাম যতটুকু বেড়েছে ঠিক ততটুকুই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। যেহেতু সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাই আমরাও চাই সরকারিভাবে বাসের ভাড়া সমন্বয় করা হোক।’
সারাবাংলা/ইউজে/একে