ভুয়া চেকে ট্রাক্টর কিনে প্রতারকের জালিয়াতি, জেল-জরিমানা কৃষকের
৬ নভেম্বর ২০২১ ১৬:৪৫
ঢাকা: রফিকুল ইসলাম সবুজ। ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার জগৎপুর গ্রামের এক কৃষক। নিজের নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই ন্যাশনাল কমার্স অ্যান্ড ক্রেডিট ব্যাংকে (এনসিসি)। তবুও এক প্রতারক তার নামে অ্যাকাউন্ট করে সেই অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ট্রাক্টর কিনেছেন। এবং ট্রাক্টরের মূল্য পরিশোধে যে চেক বিক্রেতাকে দেওয়া হয়েছে সেটি ডিজঅনার হয়েছে। আর সেই চেক ডিজঅনারের মামলায় জেল-জরিমানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এই কৃষক।
কৃষক রফিকুলের দাবি, তার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে জালিয়াতি করা হয়েছে। অ্যাকাউন্টে তার নাম-ঠিকানা ঠিক থাকলেও ছবি ব্যবহার করা হয়েছে অজ্ঞাত পরিচয় একজনের। ফেনীর ওই কৃষকের নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ট্রাক্টর বিক্রি বাবদ চেক ডিজঅনার দেখিয়ে এই মামলা করা হয় বলে জানা গেছে।
রফিকুল বলছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কুমিল্লা শাখা তো দূরের কথা এনসিসি ব্যাংকের দেশের কোনো শাখাতেই অ্যাকাউন্ট নেই তার। তিনি বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে গ্রামেই থাকেন। চাষাবাদ, হাসমুরগি ও ছাগল-ভেড়া পালন করেই চলে তার সংসার। অসহায়ত্ব প্রকাশ করে ওই কৃষক বলেন, ‘প্রতিদিনই আমার বাড়িতে পুলিশ আসছে। আমি পলাতক, আমার পরিবার অসহায় অবস্থায় আছে।’
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, কর্নফুলী লি. নামের এক কোম্পানির প্রতিনিধি জাহিদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি এনআই এক্টে ঢাকা মহানগর যুগ্ম জজ ৫ম আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাজা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সবুজ।
মামলার নথি থেকে আরও জানা যায়, ২০১০ সালের ১১ জুলাই কর্ণফুলী লি. থেকে কিস্তিতে একটি মাহিন্দ্র ট্রাক্টর বিক্রয় দেখানো হয়েছে। সেই ট্রাক্টরের কিস্তি বকেয়া দেখিয়ে ২০১৫ সালে এনসিসি ব্যাংকের কুমিল্লা শাখার হিসাব নং- ০৩১০০১০৯২৭ এর একটা চেক (নম্বর- ১৩৮১০২০২) অনুকূলে ৬ লাখ ১১ হাজার ৫৫০ টাকার চেক ডিজওনার দেখিয়ে মামলা করেন।
২০২১ সালে ঢাকা মহানগর যুগ্ম জজ ৫ম আদালতে অভিযুক্তকে ছাড়াই একতরফা রায় হয়। রায়ে ৩ মাসের সাজা এবং ৬ লাখ ১১ হাজার ৫৫০ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে গেলে রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সবুজ ও তার পরিবার এই মামলা ও জালিয়াতির কথা জানতে পারেন।
কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সবুজ বলেন, ‘আমি আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানতে পারি চেক ডিজঅনারের মামলায় ৫০ শতাংশ টাকা অর্থাৎ ৩ লাখ ৫ হাজার ৭৭৫ টাকা জমা দিয়ে জামিন আবেদন বা আপিল করতে হবে।’ গরিব কৃষকের দাবি, তিনি সেই ট্রাক্টর-ই কেনেননি। এমনকি যে চেক ডিজঅনার মামলা দেওয়া হয়েছে সেই চেক এবং উল্লিখিত অ্যাকাউন্টটি তার নয়।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, কেন তিনি এই হয়রানির শিকার হবেন? আর এত টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন? রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সবুজ আরও বলেন, ‘এনসিসি ব্যাংকের ঢাকায় যোগাযোগ করা হলে দেখা যায়, এনসিসি ব্যাংকের কুমিল্লা শাখা আমার নামের একাংশ (মো. রফিকুল ইসলাম ভূইয়া) এবং ঠিকানা ব্যবহার করে এই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকে যে ছবি দিয়ে এ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তা আমার নয়। অপর একজনের ছবি দিয়ে এ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।’
রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সবুজ বলেন, ‘আমি মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই চাই এবং যে বা যারা এ প্রতারণা করেছে, সেই প্রতারক চক্রের শাস্তি দাবি করছি।’
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ভুক্তভোগী কৃষকের নাম মো. রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সবুজ। তবে মামলা ও ব্যাংকের নথিতে নাম উল্লেখ আছে মো. রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।
ফেনীর ফুলগাজীর ৩ নম্বর দরবারপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর জগৎপুর ওয়ার্ডের টানা তিন বারের ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান মজুমদার। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সবুজ একজন নিরীহ ও সৎ মানুষ। তিনি আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। গ্রামে থেকে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার নামে যে মামলা হয়েছে তা মিথ্যা।’
এ ব্যাপারে এনসিসি ব্যাংকের জনসংযোগ শাখায় যোগাযোগ করে কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সারাবাংলা/ইউজে/একে