জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি আত্মঘাতী, ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি
৬ নভেম্বর ২০২১ ১৭:১৫
ঢাকা: দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে মনে করছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। আর এই মূলবৃদ্ধির অজুহাতকে কাজে লাগিয়ে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির পুরোনো কৌশল তথা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যহারের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটের সাগর-রুনি মিলনায়াতন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও ধর্মঘটের নামে পরিবহন নৈরাজ্য বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন সংগঠনটির মহাসচিব এসব কথা বলেন।
এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক মহামারির কারণে দফায় দফায় লকডাউনে দেশের ৭৭ ভাগ মানুষের আয় কমেছে। কাজ হারিয়ে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের মানুষজন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে মানুষের যাতায়াত, পণ্য পরিবহন, খাদ্যপণ্য ও কৃষিজ উৎপাদনসহ সামগ্রিক ব্যয় আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। পণ্য ও সেবামূল্য আরও একদফা বৃদ্ধির ফলে চরমভাবে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। এতে নতুন করে আরও কয়েক কোটি মানুষ দারিদ্রের ঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় সরকার উচ্চহারে তেল বিক্রি করে গত ৬ বছরে ধরে একচেটিয়া মুনাফা করেছে। এতে সরকার প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। মাত্র ৫ মাস লোকসানে জ্বালানি তেল বিক্রি করায় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি।
যাত্রী কল্যাণের মহাসচিব আরও বলেন, বিশ্ববাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে ২০১৩ সালে তেলের দাম বাড়ান হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অর্ধেকে নেমে আসলে সরকার লিটার প্রতি মাত্র ৩ টাকা দাম কমিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আরও ২ দফায় দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে ৩ টাকা মূল্য কমানোর সুফল ব্যবসায়ীরা পেলেও যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একইভাবে বর্তমানে একলাফে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে দৈনিক ২০ কোটি টাকা লোকসান কমানোর নামে দেশে সংকটাপন্ন সাধারণ জনগণের পকেট থেকে দৈনিক ৫০০ কোটি টাকা লোপাটের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হলো। অথচ আমাদের ৬ লাখ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট থেকে জ্বালানি খাতে মূল্য না বাড়িয়েও বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা বছরে ভর্তুকি দেওয়ার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে। সংকট কেটে গেলে ধাপে ধাপে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা যেত।
প্রতিবেশি দেশে পাচারের শঙ্কায় দেশের বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা দেশে শক্তিশালী পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট যেমন- র্যাব, সিআইডি, হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ, পিবিআইসহ পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট রয়েছে। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এতগুলো বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে সীমান্তে তেল পাচার ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
তাই দ্রুত জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করে পরিবহন ধর্মঘটের নামে পরিবহনের নৈরাজ্য থেকে দেশের যাত্রী সাধারণসহ জনগণকে মুক্তি দিতে আমি সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আকুল আহ্বান জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
সারাবাংলা/এআই/এনএস