আফগানিস্তানে নারী অধিকারকর্মীকে গুলি করে হত্যা
৬ নভেম্বর ২০২১ ২৩:২১
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে নারী অধিকারকর্মী ফ্রোজান সাফিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় তিন মাস আগে (আগস্ট) তালেবান পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর এই প্রথম কোনো নারী অধিকারকর্মীকে হত্যার ঘটনা ঘটল। ২৯ বছরের ফ্রোজান সাফি অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মাজার-ই-শরীফ শহরের এক মর্গে তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার আগে ২০ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ ছিলেন সাফি। মরদেহ শনাক্ত করতে এসে সাফির বোন বলেন, ‘আমরা পরনের কাপড় দেখে চিনতে পেরেছি। সারা চেহারায় বুলেটের আঘাত; চেনার কোন উপায় নেই।’
সাফির বোন রিটা পেশায় একজন চিকিৎসক। বোনের মরদেহ সম্পর্কে আরও বলেন, ‘ওর সারা শরীরে বুলেটের চিহ্ন। মাথা, বুক, হৃদপিণ্ড, কিডনি ও পায়ে বুলেটের দাগ গুণে শেষ করা যাবে না।’
আফগানিস্তানের বলখ প্রাদেশিক হাসপাতালের চিকিৎসক মেরাজ ফারুকি জানান, বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) তালেবান সৈন্যরা দুই নারীর মরদেহ নিয়ে আসে যাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
বলখ প্রদেশ তালেবানের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক জাবিউল্লাহ নূরানি জানিয়েছেন মাজার-ই-শরীফের একটি ভবনে আরও দুই পুরুষের সঙ্গে ওই দুই নারীর মরদেহ পড়ে ছিল। ঘটনাটিকে ‘ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব’ হিসেবে উল্লেখ করে ওই তালেবান মুখপাত্র বলেছেন, পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে।
এই সব মৃত্যুর খবর তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে ব্যাপক ভীতি সৃষ্টি করছে যেখানে পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। আবার এসব হত্যাকাণ্ডের দায়মুক্তিও কিছুটা বিভ্রান্তিকর পরিবেশ তৈরি করেছে।
আগস্টের মাঝামাঝি থেকে, নারীরা তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষিত করার দাবিতে তালেবানদের বিরুদ্ধে নিয়মিত, দেশব্যাপী বিক্ষোভ করেছে। তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পর থেকে প্রতিদিনই আফগানিস্তানে নারীর অধিকার একটু একটু করে সঙ্কুচিত হয়েছে । মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বাস্তবিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নতুন সরকারে কোনো নারী প্রতিনিধি রাখা হয়নি। নারীদের বেশিরভাগ খেলাধুলা এবং কাজ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে তালেবান শাসন আফগানিস্তানে সেবামূলক কার্যক্রম থেকেও নারীদের নিষিদ্ধ করেছে যার ফলে সেদেশে চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
অধিকারকর্মীদের অভিযোগ তালেবানরা তাদেরকে শিকারের মত খুঁজে বের করছে যাতে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বা মায়েদের সংগঠনগুলো ভয়ে কাজ থামিয়ে দেয়।
অক্টোবরের শেষ দিকে সদ্য মৃত ফ্রোজানের কাছে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বলা হয় সে যেন যত দ্রুত সম্ভব অধিকারকর্মী হিসেবে করা কাজের সমস্ত প্রমাণ গুছিয়ে নিরাপদ কোনো আশ্রয়ে সরে পড়ে। এরপর ফ্রোজান তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা ডিগ্রিসহ আরও কিছু কাগজপত্র ব্যাগে ভরে একটি সাদা-কালো স্কার্ফ মাথায় দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বলে জানায় তার বোন।
এদিকে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জনয় আবেদন করেছিল ফ্রোজান। যা অনেকদূর এগিয়েছিল বলে বিশ্বাস তার বোন রিটার।
ফ্রোজান হত্যার জন্য সরাসরি তালেবানকে দায়ী করতে ভীত রিটা। তার বোনকে কারা হত্যা করেছে তা সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই বলে জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে।
তাদের বাবা ৬৬ বছরের আব্দুল রাহমান সাফি মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তার মেয়ের মরদেহ শহরের অদূরের একটি কূপে পাওয়ার পর হাসপাতালে অজ্ঞাতনামা হিসেবে নিবন্ধিত হয়।
দ্য গার্ডিয়ানকে যাহ্রা নামের আরেক বিক্ষোভ সংগঠক নিরাপত্তার খাতিরে তার পুরো নাম বলতে চাননি। তিনি বলেন, মাজার-ই-শরীফে তালেবানবিরোধী সাম্প্রতিক বিক্ষোভে ফ্রোজান তার সঙ্গেই ছিলেন। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর হ্যাক করা হয়েছে যার ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানান এই অধিকারকর্মী।
তালেবানদের বিরুদ্ধে ভিন্নমতের নারীদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণের অভিযোগ আছে। দেশব্যাপী তালেবানদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদেরকে আটক, বৈদ্যুতিক ব্যাটন দিয়ে পেটানোর অভিযোগ আছে।
সারাবাংলা/আরএফ/একেএম