উদ্বোধনেই দায় শেষ, জনশূন্য বিএসএমএমইউ’র জরুরি বিভাগ!
৬ নভেম্বর ২০২১ ২২:২৩
ঢাকা: আনিস চৌধুরী। গণমাধ্যমকর্মী। থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) রাত ১১ টার দিকে আনিস চৌধুরীর মায়ের মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা দেখা দেয়। জরুরি ভিত্তিতে কোথায় চিকিৎসা পাওয়া যাবে?— এই তথ্যের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিতেই জানতে পারেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত রোগীদের জন্য তিনটি বেড রাখার বিষয়েও ঘোষণা দিয়েছেন বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। এই খবরে আশ্বস্ত হয়ে অসুস্থ মাকে নিয়ে বিএসএমএমইউ’র জরুরি বিভাগের উদ্দেশে মা’কে নিয়ে রওনা দেন আনিস চৌধুরী।
কিন্তু হাসপাতালের তিন নম্বর গেইটে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের কাছে বিএসএমএমইউ’র জরুরি বিভাগের অবস্থান জানতে চাইলে তারা কোনো তথ্য দিতে পারেননি। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ করে মেলে জরুরি বিভাগের সন্ধান। কিন্তু বিধি বাম! জরুরি বিভাগ খুঁজে পেলেও সেখানে ছিল না কোনো চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী। কীভাবে চিকিৎসা পাওয়া যাবে তার উত্তর জানার জন্যও কাউকে পাওয়া যায়নি সেখানে।
আনিস চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থেকে বিএসএমএমইউ’র জরুরি বিভাগে এসেছি অসুস্থ মাকে নিয়ে। সকালেই নাকি এখানে ঘটা করে এই জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা উদ্বোধন করা হয়েছে। যেখানে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হবে। কিন্তু রাতে এসেই কাউকে পেলাম না।’
শুধুমাত্র ২ নভেম্বরই নয়, সরেজমিনে দেখা গেছে উদ্বোধনের পর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত কার্যত জনশূন্য বিএসএমএমইউ’র জরুরি বিভাগ। ৩ নভেম্বর সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটির জরুরি বিভাগে গিয়ে জানা যায়, উদ্বোধনের পরে ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত চিকিৎসক বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যকর্মীর রোস্টার ঠিক করা হয়নি। ১ ও ২ নভেম্বর তাই জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ৩ নভেম্বর সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটির জরুরি বিভাগে দেখা যায়, দিনে একজন নার্স কর্মরত থাকলেও রাতে কেউই ছিলেন না।
এর আগে, ১ নভেম্বর বিএসএমএমইউ’র জরুরি বিভাগ উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। উদ্বোধন শেষে তিনি বলেন, ‘জরুরি বিভাগের কার্যক্রম শুরু ছিল আমাদের কাছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়। আরও আগেই এটি শুরু হওয়ার কথা থাকলে করোনা সংক্রমণের কারণে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। জরুরি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উদ্বোধনের ফলে এখন থেকে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার দরজা আরও প্রসারিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মতো সেবা দেবো না। সেখানে যত রোগী আসে তাদের সবাইকেই ভর্তি নেওয়া হয়। আমরা তা করব না। আমাদের এখানে যত শয্যা আছে, তত রোগীই সেবা পাবেন। জরুরি বিভাগে ভর্তি রোগীদের প্রয়োজনবোধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭টি বিভাগের জরুরি রোগীরা এখানে চিকিৎসা পাবেন। হাসপাতালে আসা সব রোগীকে সেবা দিতে মোট ১০০টি বেড প্রস্তুত আছে।’
উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের প্রায় দুই হাজার চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তারা রোস্টার পদ্ধতিতে রোগীদের সেবা দেবেন। এখানে চোখ-নাক-গলা বা জরুরি রোগীকে তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রপচারের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও আমাদের আলাদা ইনভেস্টিগেশন রুম ও জরুরি ল্যাব রয়েছে। একইসঙ্গে জরুরি বিভাগেই সিটিস্ক্যান ও এমআরআই’র ব্যবস্থা রয়েছে।’
এর আগে, ৩১ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ‘স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। অবশ্যই তিন থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিতে হবে। আর এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই ১ নভেম্বর থেকে চালু হতে যাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ জরুরি বিভাগে তিনটি শয্যা স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’
ঘোষণা দেওয়ার পরেও কেনো জরুরি বিভাগে মিলছে না সেবা?— এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘জরুরি বিভাগে সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ইতোমধ্যেই চিকিৎসকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রোগীরাও সেখান থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।’
প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে জনশূন্য জরুরি বিভাগ দেখার কথা জানালে তিনি বলেন, ‘তাহলে বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে দেখতে হবে। কারণ, আমাকে জানানো হয়েছে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আমি বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।’
জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ’র পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘জরুরি বিভাগে সেবা তো দেওয়া হচ্ছে।’ সরেজমিনে প্রতিবেদক জরুরি বিভাগে কাউকে না পাওয়ার বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘এখন একটা কাজে ব্যস্ত আছি। তাই কথা বলতে পারছি না।’
উল্লেখ্য, বিএসএমএমইউ প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৪ বছর পরে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানটিতে জরুরি বিভাগ উদ্বোধন করা হয় ১ নভেম্বর।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম