Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে ‘কিছু’ গণপরিবহন নেমেছে, ভাড়া দ্বিগুণ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ নভেম্বর ২০২১ ১২:৫৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: অঘোষিত ধর্মঘটে দুই দিন বন্ধ থাকার পর রোববার (৭ নভেম্বর) বাস-হিউম্যান হলারসহ কিছু গণপরিবহন চট্টগ্রাম নগরীর রাস্তায় নেমেছে। তবে যথারীতি জিম্মি রয়েছেন যাত্রীরা। নগরীতে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। জেলায় অভ্যন্তরীণ রুটের গণপরিবহনগুলোতেও প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

এদিকে দুই দিন পর চট্টগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দূরপাল্লার কিছু বাসও ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। তবে প্রকাশ্যে দূরপাল্লার বাসের কোনো টিকেট বিক্রি হচ্ছে না। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে যাত্রী নিয়ে বাসগুলো ঢাকা, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে।

সরকারি সিদ্ধান্তে বুধবার (৩ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বেড়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার পরিবহন চালানো বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ড ভ্যান ড্রাইভার ইউনিয়ন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার অথবা ভাড়া বাড়ানো না হলে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে বাস এবং পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।

এ অবস্থায় সারাদেশের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় চলাচলকারী সকল বাস এবং এর সঙ্গে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা সরাসরি যাওয়া দূরপাল্লার বাস চলাচল শুক্রবার সকাল থেকে বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম নগরীতে রিকশা ও অটোরিকশা ছাড়া সকল ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে।

শুক্রবার ছুটির দিনে যানবাহনের অভাব তেমন দৃশ্যমান না হলেও শনিবার সকালে কর্মজীবী মানুষদের কর্মস্থলে পৌঁছতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গণপরিবহন চলাচল বন্ধের অজুহাতে বেড়ে যায় রিকশা-অটোরিকশার ভাড়াও। অটোরিকশায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। শনিবার সকাল থেকে অটোরিকশা চলাচলে বাধা দিতে দেখা গেছে নগরীর টাইগারপাসসহ বিভিন্ন এলাকায়।

এ অবস্থায় রোববার (৭ নভেম্বর) সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে বাস, হিউম্যান হলার, অটোরিকশা চালানোর ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ। তবে চট্টগ্রাম নগরীতে চলাচলকারী গণপরিবহনের আরেক নিয়ন্ত্রক সংগঠন সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা এখনও গাড়ি বন্ধের সিদ্ধান্তে অনড় আছেন।

চট্টগ্রাম শহরে ১৫টি রুটে বাস, ১৭টি রুটে হিউম্যান হলার এবং ২১ টি রুটে অটোটেম্পু চলাচল করে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, তাদের সিদ্ধান্তের পর এসব রুটের অধিকাংশ গণপরিবহনই রাস্তায় নেমেছে।

তবে গণপরিবহন নামলেও বাড়তি ভাড়া নিয়ে চাপে পড়তে হচ্ছে কর্মজীবীদের। নগরীর জামালখান থেকে আগ্রাবাদে যাওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা খোরশেদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ১০ টাকা বাড়তি ভাড়া নিয়েছে। এ হিসেবে ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’

ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোথাও কোথাও পাঁচ টাকার ভাড়া দশ টাকা নিচ্ছে, ভাড়া দ্বিগুণ আদায় করছে—এটা আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু মানুষ দুই দিন ধরে গাড়ির জন্য কষ্ট করেছে। তাদের গাড়ি না পাবার কষ্টটা আপাতত আমরা সামাল দিয়েছি। ভাড়ার বিষয়টি আমরা মনিটরিং করছি।’

রোববার সকালে নগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় গিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে কয়েকটি বড় বাস চট্টগ্রাম ছাড়তে দেখা গেছে। ওই এলাকায় দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলো খোলা থাকলেও টিকেট বিক্রি বন্ধ দেখা গেছে। তবে যেসব বাস কক্সবাজারের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছাড়ছে সেগুলোকে বাধা দিতে দেখা যায়নি। দূরপাল্লার এসব বাসের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বাসগুলো কক্সবাজারে যাচ্ছে। প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে অন্তত ১০০ টাকা করে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সকাল থেকে দক্ষিণ ও উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বাস এবং হিউম্যান হলার নগরীতে আসতে দেখা গেছে। শাহ আমানত সেতু এলাকায় বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলা থেকে আসা বাসের যাত্রীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে অন্তত ১০ টাকা বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে আসা বাসের যাত্রীদের কাছ থেকেও অন্তত ২০ টাকা বাড়তি ভাড়া নিতে দেখা গেছে। একইভাবে চট্টগ্রাম শহর থেকে যেসব বাস ও হিউম্যান হলার এসব উপজেলায় যাচ্ছে, তাদের কাছ থেকেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

বাঁশখালীর উদ্দেশে রওনা দেওয়া বেসরকারি কলেজের শিক্ষক কফিল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাসে ওঠার সময় বলে দেওয়া হয়েছে, যেখান থেকেই উঠি কিংবা নামি, ভাড়ার সঙ্গে ১০ টাকা বাড়তি দিতে হবে। আমাদের কর্মস্থলে যেতে হবে, কোনো উপায় নেই।’

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ মুসা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভাড়া ৮-১০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ উপজেলা থেকে নগরীতে যেসব বাস-হিউম্যান হলার চলাচল করছে, তারা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। কক্সবাজার রুটে তেমন গাড়ি চলাচল করছে না। বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েকটা গেলেও সেগুলোর তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে আমরা শ্রমিকদের বাড়তি ভাড়া নিতে নিষেধ করেছি। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর যেটি নির্ধারণ হয় সেটাই যেন নেওয়া হয়, এমন নির্দেশনা সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া আছে।’

চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেমন কোনো গাড়ি যায়নি। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি গেলেও আমরা বলেছি যেন কোনোভাবেই বাধা দেওয়া না হয়। কারণ আমরা কোনো ধর্মঘট করছি না। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের লস হচ্ছে বলে আমরা গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছি। পিকেটিং করলে সুযোগসন্ধানীরা সুযোগ নেয়। সুতরাং পিকেটিং করা যাবে না, কেউ গাড়ি চালাতে চাইলে বাধা দেওয়া যাবে না।’

সারাবাংলা/আরডি/আইই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর