গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে বৈঠক চলছে
৭ নভেম্বর ২০২১ ১২:৫৪
ঢাকা: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে সরকার ও মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক চলছে। রোববার (৭ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে এ বৈঠক শুরু হয়।
বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সভাপতিত্বে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ, শ্যামলী এনআর’র রাকেশ ঘোষ, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও পরিবহন মালিকরা বৈঠকে উপস্থিত আছেন।
প্রতি লিটার জ্বালানি তেলের দাম ১৫ টাকা বৃদ্ধি করায় ২৩ শতাংশ ভাড়া বৃ্দ্ধির বিষয়ে সভায় আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সভার কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই পত্রে বলা হয়— সভায় আলোচনার ভিত্তিতে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ ব্যয় বিশ্লেষণ করে দূরপাল্লার ভাড়া ১ দশমিক ৮২ ও মহানগরীর ভাড়া ২ দশমিক ১০ টাকা বাড়ানো হতে পারে। বর্তমান বাস ভাড়ার সঙ্গে জ্বালানি তেলের (ডিজেল) মূল্যবৃদ্ধির হার ২৩ দশমিক ০৮ শতাংশ সমন্বয় করে বাস ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনা হতে পারে।
কার্যপত্রে আরও বলা হয়— বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব কর্তৃক ঢাকা চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দূরপাল্লার রুটে ৬ থেকে ৭ বছর ধরে বাস ভাড়া বৃদ্ধি হয়নি, করোনাকলীনও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৪ নভেম্বর বাস ভাড়া বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন। তাদের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এ সভার আয়োজন করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি ডিজেল চালিত আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা রুটে চলাচলকারী ডিজেল চালিত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া (ঢাকা মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর ব্যতীত) প্রতি যাত্ৰী প্ৰতি কিলোমিটার ১ দশমিক ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে গেজেট জারি করা হয়। ২০১৬ সালের ৪ মে থেকে ডিজেলের মূল্য ৬৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করায় আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা বাসের ভাড়া ১ দশমিক ৪৫ টাকার পরিবর্তে ১ দশমিক ৪২ টাকা পুনরায় নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া প্রতি যাত্রী প্রতি কিলোমিটার যথাক্রমে ১ দশমিক ৭০ টাকা ও ১ দশমিক ৬০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এ ছাড়া ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি’র (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাস উভয় ক্ষেত্রে ভাড়ার হার প্রতি যাত্রী প্রতি কিলোমিটারে ১ দশমিক ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ও ৫ টাকা নির্ধারণ করা বলে ওই কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়।
পত্রে আরও বলা হয়— গত ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাস ভাড়া পুনরায় নির্ধারণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় এবং দূরপাল্লা রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনরায় নির্ধারণের জন্য ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়। উক্ত ব্যয় বিশ্লেষণে দূরপাল্লা রুটে চালকসহ ৫২ আসনের ডিজেল চালিত বাসের প্রতি যাত্রী প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ২ দশমিক ৭ টাকা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় চলাচলকারী ডিজেল চালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া প্রতি যাত্রী প্রতি কিলোমিটার ২ দশমিক ২১ টাকা সুপারিশ করা হয়। তবে উক্ত ব্যয় বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কর্তৃক কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। আরও উল্লেখ্য যে, এ ব্যয় বিশ্লেষণে হিসাব করার ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয়ে ভুল ধরা পড়েছে, যা পরবর্তী সময়ে চিহ্নিত করা হয়।
ভুলের বিষয়ে ওই কার্যপত্রে বলা হয়— ২০১৯ সালের অননুমোদিত সুপরিশে ব্যয় বিশ্লেষণ অনুযায়ী দূরপাল্লা ও মহানগর এলাকায় চলাচলকারী ডিজেল চালিত বাস ভাড়া হবে যথাক্রমে ১ দশমিক ৯৪ টাকা ও ২ দশমিক ৩৩ টাকা। ওই ব্যয় বিশ্লেষণে ডিজেলের মূল্য ব্যতীত ব্যয়ের সকল আইটেম অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র ডিজেলের মূল্য ৬৫ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা পুনরায় নির্ধারণ করা হলে দূরপাল্লা ও মহানগর এলাকায় চলাচলকারী ডিজেল চালিত বাস ভাড়া দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ দশমিক ৯ টাকা এবং ২ দশমিক ৪৯ টাকা।
পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে বৈঠকে কত শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করা হয়েছে— এমন বিষয়টি জানতে চাইলে বৈঠকে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা কোনো দাবি করিনি। ব্যয় বিশ্লেষণ করে যে ভাড়া আসবে সরকার তাই নির্ধারণ করবে।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/এনএস