Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগে ফাঁসি কার্যকর নয়: আপিল বিভাগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৭ নভেম্বর ২০২১ ১৫:৫২

ফাইল ছবি: হাইকোর্ট

ঢাকা: পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে ফাঁসি কার্যকর না করতে আইজি প্রিজনসের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলকে কথা বলতে বলেছেন আপিল বিভাগ। রোববার (৭ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ কথা বলেন।

২০০৪ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগরে সাবিনা (১৩) নামে এক মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে গত ১৮ আগস্ট আসামি শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামি শুকুর আলীর আইনজীবী আদালতে জানান, আসামিকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। অ্যাডভান্স অর্ডারের কারণে তাকে ফাঁসি দিতে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি। রিভিউ আবেদন করা হবে, সে পর্যন্ত ফাঁসি যাতে না দেওয়া হয়। আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

তখন আদালত বলেন, আবেদন করেছেন? জবাবে আইনজীবী বলেন, ওকালতনামা পাইনি। ডিসির মাধ্যমে এখন ওকালতনামা পেতে ১০ দিন লাগে। অ্যাডভান্স অর্ডারের জন্য আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়েছে। এখনো রায়ে সই হয়নি।

আদালত বলেন, অ্যাডভান্স অর্ডার দেওয়া হয়েছে যাদের মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন হয়েছে, তাদের নরমাল সেলে দেওয়ার জন্য।

এক পর্যায়ে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি আইজি প্রিজনসকে বলবেন পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে যাতে দণ্ড কার্যকর করা না হয়। এ ছাড়া আসামিপক্ষের আইনজীবীকে চেম্বার বিচারপতির কাছে আবেদন দিতে বলেন আদালত।

এ বিষয়ে আইনজীবী হেলাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ১৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আমার আসামি শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। আর এই মামলার অপর তিন আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন এবং এই তিনজনকে কারাগারের কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তরে অ্যাডভান্স অর্ডার কারা কর্তৃপক্ষকে পাঠাতে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী রায়ের অ্যাডভান্স অর্ডারটি কুষ্টিয়ার বিচারিক আদালত হয়ে কারাগারে যায়। পরে শুকুর আলীর পরিবার আমাকে জানায়, গত বুধবার (৪ নভেম্বর) শুকুর আলীর পরিবারকে কারা কর্তৃপক্ষ শেষবারের মতো শুকুর আলীর সঙ্গে দেখা করার জন্য ডেকে নেন। এরই মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নেয় কারা কর্তৃপক্ষ। অ্যাডভান্স অর্ডারের পর রাষ্ট্রপতির কাছে করা প্রাণভিক্ষার আবেদন নামঞ্জুর হলে কারা কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগ গ্রহণ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এদিকে আমি আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ না হওয়ায় এবং ওকালতনামার পেতে দীর্ঘসূত্রতার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আজ (৭ নভেম্বর) আমি আপিল বিভাগের নজরে আনি। আপিল বিভাগকে আমি বলি- রিভিউ নিষ্পত্তির আগে যেন আমার আসামির ফাঁসি কার্যকর করা না হয়।’

আদালত আমার আবেদন বিবেচনায় নিয়ে আমাকে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে একটি আবেদন করতে বলেন। এ সময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন আইজি প্রিজন্সকে বলে দিতে যে, আপাতত ফাঁসি কার্যকরের সিদ্ধান্ত যেন স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী হেলাল উদ্দিন।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে একজন আইনজীবী আপিল বিভাগে আবেদন করলেন যে, তার আসামির আপিলটা ডিসমিস (খারিজ) হয়েছে, কিন্তু তারা এখনো পূর্ণাঙ্গ রায়টি পাননি। রায়টি পেলে তারা রিভিউ করতে পারবেন কিন্তু এর আগেই নাকি আসামির ফাঁসি কার্যকরের পদক্ষেপ নিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। তখন আদালত আইজি প্রিজন্সকে বলতে বললেন যে, পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগে যেন ফাঁসি কার্যকর করা না হয়। এ ছাড়া সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, পরবর্তীতে বিষয়টি আমাদের কাছে (আদালতে) এলে একটা গাইডলাইন দিয়ে দেবেন।’

আজকের মৌখিক আদেশের প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি যারা কনডেম সেলে থাকে, তাদের যখন সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তখন তাদের কনডেম সেল থেকে সরিয়ে নরমাল সেলে আনা হয়। যাতে সাজা কমা আসামিকে আর একটুও যেন কনডেম সেলে থাকতে না হয়। সে অনুসারেই এই মামলায় সাজা কমে যাবজ্জীবন পাওয়া তিনজনের ক্ষেত্রে কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে নিতে অ্যাডভান্সড অর্ডার দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত।’

২০০৪ সালে আগে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ১৩ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে অপর তিন আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আসামিদের করা জেল আপিলের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির ভার্চুয়াল বেঞ্চ গত ১৮ আগস্ট এই রায় দেন। ওই রায়ে আদালত সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া তিনজনকে কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন।

ওইদিন আদালতে আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

২০০৪ সালের ২৫ মার্চ রাতে দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের আব্দুল মালেক ঝনুর মেয়ে সাবিনা (১৩) প্রতিবেশীর বাড়িতে টেলিভিশন দেখে বাড়ি ফেরার পথে আসামিরা তাকে অপহরণ করে। এরপর লালনগর ধরমগাড়ী মাঠের একটি তামাক ক্ষেতে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে। পরদিন সাবিনার বাবা আব্দুল মালেক ঝনু বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। এ মামলার বিচার শেষে ২০০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড দেন কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর হোসেন।

আসামি পাঁচজন হলেন- কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের খয়ের আলীর ছেলে শুকুর আলী, আব্দুল গনির ছেলে কামু ওরফে কামরুল, পিজাব উদ্দিনের ছেলে নুরুদ্দিন সেন্টু, আবু তালেবের ছেলে আজানুর রহমান ও সিরাজুল প্রামাণিকের ছেলে মামুন হোসেন।

পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। এর মধ্যে কামু ওরফে কামরুল মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এরপর আসামিরা আপিল করেন।

পরে আপিল বিভাগ শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। আর অন্য তিন আসামি নুরুদ্দিন সেন্টু, আজানুর রহমান ও মামুন হোসেনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন আপিল বিভাগ।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস

পূর্ণাঙ্গ রায় ফাঁসি কার্যকর নয়


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর