পণ্য পরিবহনে ধর্মঘট প্রত্যাহার হচ্ছে না
৭ নভেম্বর ২০২১ ২০:০২
ঢাকা: ডিজেলের বাড়তি দাম না কমালে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকছে। ট্রাক কাভার্ড ভ্যান ট্যাংকার লরি মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান সারাবাংলাকে রোববার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ডিজেলের দাম না কমালে আমরা কোনোভাবেই পণ্য পরিবহনের ভাড়ায় পোষাতে পারব না। এই অবস্থায় আমাদের দাবি মানতেই হবে। না হলে আমাদের কর্মসূচি চলবে।’
ডিজেলের দাম কমানোর কোনো আভাস পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না আভাস পাইনি। সরকার যদি ডিজেলের দাম না কমায় তাহলে আমাদের যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার করতে হবে, বিভিন্ন সেতুতে যে টোল আদায় করা হয় তা প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন বা পৌরসভায় এলাকায় যে সব টোল নেওয়া হয় তা প্রত্যাহার করতে হবে।’
রুস্তম আলী খান বলেন, ‘আজকে বিআরটিএ ভবনে বাস মালিকরা বৈঠক করেছেন। আমাকে বৈঠকে থাকার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আমি যাইনি। কারণ বাস মালিকরা ডিজেলের দাম কমানোর জন্য কোনো দাবি-দাওয়া তোলেনি, তারা ভাড়া বাড়ানোর দাবি করেছে। সেখানে আমাদের গিয়ে কোনো লাভ নেই।’
এভাবে ধর্মঘট কতদিন চলবে এমন প্রশ্নের জবাবে রুস্তম আলী বলেন, ‘ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। ট্রাক মালিকরা আগামী বৈঠকে বসব। দাবি আদায়ের জন্য আরও কিছু কৌশল আমরা নেব।’
তবে এ সব কৌশলের বিষয়ে ‘খোলসা’ করে কিছু বলতে চাননি রুস্তম আলী।
ডিজেলের দাম বেড়ে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি। কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করে
ট্রাক কাভার্ড ভ্যান ট্যাংকার লরি মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ; বাংলাদেশ, কাভার্ডভ্যান, প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
এদিকে বাংলাদেশ, কাভার্ডভ্যান, প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে তিন দফা দাবি তুলে ধরেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
তাদের দাবিগুলো লিটারে ডিজেলের বাড়তি ১৫ টাকা দাম প্রত্যাহার, যমুনা ও মুক্তারপুর সেতুর বাড়তি টোল প্রত্যাহার, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করা।
গত ৩ নভেম্বর ডিজেল ও করোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা করেছে সরকার। ওই দিন রাতেই বাড়তি দাম কার্যকর করা হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে ডিজেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকায় সর্বাধিক ব্যবহৃত ডিজেলের ক্ষেত্রে বিপিসি লোকসানের সম্মুখীন হয়। ডিজেলে চলতি বছরের জুন মাসে লিটারপ্রতি ২.৯৭ টাকা, জুলাই মাসে ৩.৭০ টাকা, আগস্ট মাসে ১.৫৮ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ৫.৬২ টাকা এবং অক্টোবর মাসে ১৩.০১ টাকা বিপিসির লোকসান হয়।
সে হিসাবে গত সাড়ে পাঁচ মাসে সর্বাধিক ব্যবহৃত ডিজেলের ক্ষেত্রে বিপিসির মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১১৪৭.৬০ কোটি টাকা। যা সরকার কর্তৃক ভর্তুকি দিয়ে সমন্বয় করতে হবে। তাছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে প্রায় ৩৩ হাজার ৭৩৪.৭৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় বিপিসি লোকসানে চলে গেলে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে, যা জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বাস মালিকরা অঘোষিতভাবে ধর্মঘট শুরু করেন। পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখেন ট্রাক মালিক-শ্রমিকরা, এমনকি লঞ্চের ভাড়া শতভাগ বাড়ানোর দাবিতে। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বাস ভাড়া ২৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে আর লঞ্চের ভাড়া ৩৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ভাড়ার বাড়ার পর বাস ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হলেও ট্রাকে পণ্য পরিবহনের বিষয়টি ঝুলে আছে সরকারি সিদ্ধান্ত না আসায়।
সারাবাংলা/একে